বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ২২ কিলোমিটার বদ্ধ খালে প্রায় একযুগ ধরে কচুরিপানা জমে আটকে রয়েছে। ফলে খালের পানি দুষিত ও দুগন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। শিশু ও নারীরা চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া শরণখোলায় গভীর ও অগভীর নলকুপ ফলপ্রসু নয়। তাই অজু গোসলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে দেখা দেয় চরম পানির সংকট।
এ অবস্থায় এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে সেচ্ছাশ্রমে কচুরিপানা অপসারনের উদ্যোগ গ্রহন করে উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে গ্রামের নারী-পূরুষ, ছাত্র-শিক্ষক, স্কাউট, আনসার-ভিডিপি, গ্রামপুলিশ, এনজিও কর্মী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ নেমে পড়ে কচুরিপানা অপসরনের কাজে।
এ কর্মযজ্ঞের সহায়তা করতে কেউ বাজনা বাজাচ্ছে, কেউ বাঁশি বাজাচ্ছে, কেই খিচুড়ি রান্নায় ব্যস্ত, আবার কেউবা খাবার পানি নিয়ে এগিয়ে আসছে। এভাবেই উৎসব মুখর পরিবেশে ২২ কিলোমিটার খাল ও শাখা খালের সব কচুরিপানা অপসারন করা হয়।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুর ই আলম সিদ্দিকী জানান, বদ্ধ খালের আকটে যাওয়া এই কচুরিপানা এলাকার দুর্যোগ হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে।
তাই এ দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে সর্বস্তরের মানুষের সাথে একাধিক বৈঠক করে সেচ্ছাশ্রমে কচুরিপানা অপসারনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এ কাজে বাগেরহাট-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ও কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ সহযোগীতা করেছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, ২০১২ সালের ২০ অক্টোবর সাবেক ইউএনও কে এম মামুন উজ্জ জামানের উদ্যোগে ২০ বছরের জমে থাকা কচুরিপানা উত্তোলনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারেও আমরা সফল হয়েছি।
রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা ও খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, উপজেলার অভ্যান্তরিন ২২কিলোমিটার খালগুলোতে যেভাবে কচুরিপানা আটকে ছিল তা এলাকাবাসীর জন্য দুর্যোগে পরিনত হয়েছিল। তাই দলমত নির্বিশেষে সেচ্ছাশ্রমে সবাই একযোগে কচুরিপানা অপসারনে ঝাপিয়ে পড়েছি। তবে এভাবে আর যাতে কচুরিপানা না জমতে পারে সে ব্যপারে উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, যেকোন দুর্যোগের সময় আমি শরণখোলার মানুষের পাশে থেকেছি। তাই এলাকাবাসির দাবীর প্রেক্ষিতে কচুরিপানা অপসারনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার বাস্তবায়নে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এছাড়া মানুষকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আমি নিজে থেকে কচুরিপানা উত্তোলনের এ বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়েছি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব বলে এ ধরনের দুর্যোগে আমরা সম্মিলিতভাবে ঝাপিয়ে পড়েছি। মানুৃষের যাতে কষ্ট না হয় প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা সব সময় এভাবেই তাদের পাশে থাকবো।
কচুরিপানা অপসারনের কাজে নিয়োজিত নলবুনিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন তালুকদার, দক্ষিন আমড়াগাছিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম, গ্রামবাসী আনসার আলী, আঃ মান্নাফ, লাতিফ হাওলাদার বলেন, পানি থাকতেও পানির অভাবে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
তাই আমরা সবাই মিলে সেচ্ছাশ্রমে এই কচুরিপানা অপসারন করছি। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেচ্ছাসেবক মিন্টু ফকির, ডালিম হাওলাদার, আমিনুল ইসলাম খান, সনিয়া আক্তার, সুমি আক্তার, রুমি আক্তার বলেন, যে কোন দুর্যোগে আমারা মানুষের পাশে থাকি। তাই কচুরিপানার এ দুর্যোগেও আমাদের সকল কর্মী অংশ নিয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন, মোঃ জাকির হোসেন খান বলেন, শরণখোলার ১১৪টি স্কুলের সকল শিক্ষক কচুরিপানা উত্তোলনের এ বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহন করেছে। এ দুর্যোগে আমাদের শিক্ষকরা কেউ পিছিয়ে নেই।