মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৮:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম

আস্থার অপর নাম ডাকঘর ‘সঞ্চয়পত্র’!

  • Update Time : রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

আস্থার অপর নাম ডাকঘর ‘সঞ্চয়পত্র’!

কোটি কোটি টাকার মালিক যাঁরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়বেন, তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু যাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না বা টাকাও বেশি নেই, অথবা কারখানা করার সাহস নেই, তাঁরা কী করবেন? খাটানোর নির্ভরযোগ্য কোনো জায়গা খুঁজে না পেলে কোথায় যাবেন তাঁরা? নিশ্চিতভাবেই এর উত্তর ‘সঞ্চয়পত্র’।

সরকারি চাকরি শেষে কেউ একজন পেনশন পেলেন ৭০ লাখ টাকা। আবার কেউ জমি বিক্রি করে নগদ পেলেন দেড় কোটি টাকা। এই টাকা বিনিয়োগ করা যায় সঞ্চয়পত্রে। কারণ, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সুদ দেয়। সরকার যেটাকে সুদ হিসেবে বিবেচনা করছে, গ্রাহকদের জন্য তা কিন্তু মুনাফা। গত ১১ বছরে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদ দিয়েছে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র—এ চার সঞ্চয়পত্রই এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়। যদিও সব সঞ্চয়পত্রে সবাই বিনিয়োগ করতে পারেন না। সবগুলোর সুদের হারও এক রকম নয়।

১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করা ফরম পূরণ করেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায়। আসল ও মুনাফার টাকা আর নগদে দেওয়া হচ্ছে না।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা কিনতে পারেন। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত।

অনলাইন পদ্ধতিতে একজন গ্রাহক একক নামে এখন ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। একক নামে কেউ না কিনতে চাইলে যৌথ নামে কিনতে পারেন এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই ঊর্ধ্বসীমা ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র অবশ্য যুগ্ম নামে কেনার সুযোগ নেই।

সঞ্চয়পত্রগুলো কেনা যায় জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, সব তফসিলি ব্যাংক ও সব ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যায় এগুলো। সঞ্চয়পত্র জামানত রেখে কোনো ব্যাংকঋণ নেওয়া যায় না। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্রে সুদও কম পাওয়া যায়।

এক বছর পার হওয়ার আগেই কেউ ভাঙাতে চাইলে কোনো মুনাফাই দেওয়া হয় না। শুধু মূল টাকা নিতে হয়। আর এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে ই–টিআইএন ও ব্যাংক হিসাব থাকা এখন বাধ্যতামূলক। মেয়াদ শেষে মুনাফার হার পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ।

ডাকঘরও বিনিয়োগের উত্তম জায়গা: ‘ডাকঘর’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট্ট হলুদ খাম। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে হাতে লেখা চিঠিপত্রের চল প্রায় উঠে গেছে। ডাকপিয়ন আর দুয়ারে কড়া নাড়ে না। তবে রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র পড়া থাকলে চিঠির গুরুত্বের কথাটি ঠিকই কড়া নাড়ে মনে।

চিঠিপত্রের কথা তাহলে থাক। বরং ডাকঘরের মাধ্যমে বিনিয়োগ কী করা যায়, আমরা এখন সেই প্রসঙ্গে আসতে পারি। ডাকঘরে রয়েছে দুটি সঞ্চয় কর্মসূচি (স্কিম)। এটা সঞ্চয়পত্র নয়, বরং সঞ্চয় আমানত। এই কর্মসূচির আওতায় একটি হচ্ছে সাধারণ হিসাব, অন্যটি মেয়াদি হিসাব। সাধারণ হিসাবে সুদ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, অন্যটিতে সুদ ১১ দশমিক ২ শতাংশ। তবে টাকা বিনিয়োগ করা যায় একক নামে ১০ লাখ এবং যুগ্ম নামে ২০ লাখ।

বিনিয়োগের আরেকটি বিকল্প আছে ডাকঘরে। সেটি হচ্ছে ‘ডাক জীবন বিমা’। যুগপৎভাবে এটা বিমা পলিসি ও সঞ্চয় প্রকল্প। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনকল্যাণমূলক বিমা প্রকল্প হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও বিপণন করে ডাক বিভাগ। বাংলাদেশ অঞ্চলে এই পলিসি চালু রয়েছে ১৩৬ বছর ধরে। ১৮৮৪ সালে ডাক বিভাগের রানারদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পলিসিটি চালু করা হলেও সাধারণ জনগণের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয় ১৯৫৩ সালে।

ডাক জীবন বিমা পলিসি রয়েছে ছয় ধরনের। আজীবন বিমা, মেয়াদি বিমা, শিক্ষা বিমা, বিবাহ বিমা, যৌথ বিমা ও প্রতিরক্ষা বিমা। পলিসি শুরু হওয়ার দুই বছর পার হওয়ার পর মোট জমা টাকার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণও নেওয়া যায়। প্রিমিয়াম জমা দেওয়া যায় যেকোনো ডাকঘরে গিয়ে। আবার মেয়াদ শেষে যেকোনো ডাকঘর থেকেই টাকা তোলা যায়।

এমনকি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে কর্তনের মাধ্যমেও প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। অগ্রিম প্রিমিয়াম দিলে কিছু সুবিধাও পান গ্রাহকেরা। আবার কোনো কারণে বিমা পলিসি বাতিল হয়ে গেলে তা পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগও রয়েছে। দেশের সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি, সামরিক অর্থাৎ যেকোনো নাগরিক যেকোনো ডাকঘরে গিয়ে ডাক জীবন বিমা পলিসির আওতায় আসতে পারেন।

পলিসির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই, অর্থাৎ যেকোনো অঙ্কের পলিসি করা যায়। এর তহবিলের সব অর্থ সরকার আপন জিম্মায় রাখে। আজীবন বিমার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বছরে বোনাস পাওয়া যায় প্রতি লাখে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর মেয়াদি বিমার ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে পাওয়া যায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা বোনাস। এ বোনাসে কর রেয়াত রয়েছে।

ডাক জীবন বিমার কিস্তি জমা দেওয়া যায় মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে। নগদে যেমন দেওয়া যায়, মাসিক বেতন থেকে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিমাকারীর বয়স ও পলিসির মেয়াদ ভেদে কিস্তির হার ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন আজীবন বিমার ক্ষেত্রে ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সের গ্রাহকেরা বিমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন। আর বিমার পূর্ণতা পাবে ৫০,৫৫, ৬০ ও ৭০ বছর মেয়াদে।

মেয়াদ শেষে গ্রাহক বা বিমাকারীর মৃত্যুর পর নমিনি বা উত্তরাধিকারী টাকা পাবেন। ১৯ বছর বয়সের একজন গ্রাহক ৫০ বছরের জন্যও পলিসি করতে পারেন। ৫,১০, ১৫,২০, ২৫,৩০, ৩৫ ও ৪০ বছর মেয়াদে পলিসির পূর্ণতা হবে। সে ক্ষেত্রে মাসে প্রতি হাজারের বিপরীতে মাত্র ২ টাকা ১০ পয়সা হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

Source by [author_name]

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Recent Posts

© 2023 sundarbon24.com|| All rights reserved.
Designer:Shimul Hossain
themesba-lates1749691102