মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

বাড়ি তৈরীতে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৮ শতাংশ সুদে ২ কোটি টাকা লোন!

  • Update Time : রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২১

বাড়ি তৈরীতে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৮ শতাংশ সুদে ২ কোটি টাকা লোন!

নিজের একটি ফ্ল্যাট হবে—এটা মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে এক বড় স্বপ্ন। তাঁদের এই স্বপ্ন পূরণে এখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যেন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সুদের হার কমিয়ে গ্রাহকদের দীর্ঘ মেয়াদে আবাসন ঋণ দিতে নেমেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আবেদন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ঋণ অনুমোদন দিচ্ছে। আবার কেউ নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ আবেদন নিষ্পত্তি করছে।

বিদায়ী ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদের হার ৯ শতাংশে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয় সুদ কমানোর। বিশেষ করে আবাসন ঋণ দিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আগের চেয়ে বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকের দেওয়া ঋণের সুদহার সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।

এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বড় চমক দেখিয়েছে। ব্যাংকটি এখন ৮ শতাংশ সুদে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আবাসন ঋণের গ্রাহকদের অর্থায়ন করছে। তবে নতুন ঋণ দিচ্ছে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদে। শিগগির সুদের হার আরও দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটি। এই ব্যাংক ‘ঠিকানা’ নামে আলাদা একটি ঋণ প্রকল্প চালু করেছে।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘এখন ঋণের জন্য ভালো চাহিদাও আসছে। আমরাও ঋণ দিচ্ছি’। তিনি আরও বলেন, ‘ডিবিবিএলের আবাসন ঋণের সুদহার আরও দশমিক ৫০ শতাংশ কমবে। ফলে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে অন্য ব্যাংকের আবাসন ঋণ আমরা নেব। আর নতুন ঋণে সুদ হবে ৮ শতাংশ।’

শুধু ডাচ্-বাংলা নয়, এখন সব ব্যাংকই আবাসন ঋণে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেক মানুষ ঋণ নিয়ে নতুন ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারছেন। দেশে আবাসন ঋণের সুদহার কমিয়ে প্রথম বড় আলোচনায় আসে বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংক। ২০১৫ সালের শুরুর দিকেও ব্যাংকটি যেখানে গৃহঋণের বিপরীতে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদ নিত, সেখানে ওই বছরের ডিসেম্বরে তা কমিয়ে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে শুরু করে।

তখন ব্যাংক খাতে সুদহার ছিল ১৫ শতাংশের ওপরে। এর ফলে কম সুদে ঋণ বিতরণে সাফল্য আসে। গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি আবাসন ঋণ নেন আইএফআইসি ব্যাংক থেকে। ব্যাংকটির ‘আমার বাড়ি’ নামে আলাদা একটি পণ্য রয়েছে। এই ব্যাংক বাড়ি নির্মাণে ২ কোটি ও সেমিপাকা ভবন নির্মাণে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়।

আইএফআইসি ব্যাংকের দেখাদেখি অন্যান্য ব্যাংক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই পথে হাঁটতে শুরু করে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অন্য ঋণের চেয়ে ফ্ল্যাট কেনার ঋণ বেশি নিরাপদ। কারণ এই ঋণে খেলাপি কম এবং ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ফ্ল্যাট ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর সংকটে না পড়লে কেউ ফ্ল্যাটের মালিকানা হারাতে চান না। তাই ব্যাংকগুলো দিন দিন এই ঋণে মনোযোগ দিচ্ছে।

আগে ব্যাংকগুলো ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারত। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (লিজিং কোম্পানি) আগে থেকেই গ্রাহকের চাহিদামতো ঋণ দিতে পারছে। ফ্ল্যাট কেনা ও বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনও (বিএইচবিএফসি) ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে।

ফলে বাড়ি নির্মাণের জন্য একজন ব্যক্তি বিএইচবিএফসি থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। আর গ্রুপ করে বা দলবদ্ধ হয়ে ঋণ নিলে প্রত্যেকে পাবেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করে। এ ছাড়া ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও একজন গ্রাহক এই সংস্থা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াটিও আগের চেয়ে অনেক সহজ করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রতিষ্ঠানগুলোই ঋণ দিতে ছুটছে গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে। ব্যাংক বা বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে মোট দামের ৩০ শতাংশ টাকা নিজের থাকতে হয়। অর্থাৎ এক কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনতে প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। বাকি ৩০ লাখ টাকা ক্রেতার নিজের থাকতে হয়। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাটের দামের পুরোটাই ঋণ হিসেবে দিতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন খাতে ঋণ বিতরণে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, ব্র্যাক, দি সিটি, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রভৃতি। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ), আইডিএলসি, আইপিডিসি, ন্যাশনাল হাউজিং, লংকাবাংলা এগিয়ে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিবিএইচের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিমুল বাতেন বলেন, করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রথম তিন মাস ঋণ বিতরণ একেবারেই বন্ধ ছিল। তবে গত বছরের শেষ চার মাস ভালো ঋণ গেছে। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। আর সুদহার আগের চেয়ে কম হওয়ায় গ্রাহকদেরও আগ্রহ বেড়েছে। বলা যায়, সব মিলিয়ে আবাসন ঋণ আগের চেয়ে বেশি যাচ্ছে। এদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও আবাসন খাতে মনোযোগ দিচ্ছে। সোনালী ব্যাংক গ্রামাঞ্চলে বাড়ি নির্মাণে ‘সোনালী নীড়’ নামে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে।

নথিপত্র যা লাগবে: বাড়ি নির্মাণ ঋণের জন্য প্রথমেই দরকার যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নকশার সত্যায়িত ফটোকপি, মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, খাজনা রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি। এ ছাড়া লাগবে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস খতিয়ানের সত্যায়িত কপি। জেলা বা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে ১২ বছরের তল্লাশিসহ নির্দায় সনদ (এনইসি)। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে মূল বরাদ্দপত্র এবং দখল হস্তান্তরপত্রও লাগবে।

ফ্ল্যাট কেনার ঋণের জন্য অবশ্য কাগজপত্র কম লাগে। এ জন্য ফ্ল্যাট ক্রেতা এবং ডেভেলপারের সঙ্গে সম্পাদিত ফ্ল্যাট ক্রয়ে রেজিস্ট্রি করা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিতে হবে। এ ছাড়া জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, অনুমোদিত নকশা ও অনুমোদনপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তিপত্রের মূল কপি এবং বরাদ্দপত্র লাগবেই। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।

Source by [author_name]

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Recent Posts

© 2022 sundarbon24.com|| All rights reserved.
Designer:Shimul Hossain
themesba-lates1749691102