‘ময়না’ নামের একটি বকনা বাছুর দিনে চার লিটার করে দুধ দিচ্ছে! শুনে অবাক লাগলেও ঘটনাটি সঠিক। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের হায়দর আলী নামে এক কৃষকের বকনা বাছুরের এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। এই সংবাদ শুনে প্রতিদিন গরুর মালিকের বাড়িতে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
অনেকেই দুধ কিনে নিচ্ছেন, কেউ কেউ গরুটি বেশি দাম দিয়ে কিনে নিতেও আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
২২ মাস বয়সের কালো রঙয়ের ওই বকনা গরুটির মালিক হায়দার আলী (৫২)। তিনি উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের একজন কৃষক।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কৃষক হায়দার আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের গ্রাম থেকে উৎসুক ১৫-২০ জন ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। এ সময় ওই কৃষক দুধ (দোহন) সংগ্রহ করছিলেন।
ওই কৃষক জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল ও বিকালে দুধ সংগ্রহ করেন। বিকালেও এ পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করেন। এক বেলা দুধ সংগ্রহ না করলে এই বাছুর গরুটির ওলান ফুলে শক্ত হয়ে যায়। তিনি গত এক মাস ছয় দিন ধরে এভাবে দুধ সংগ্রহ করছেন।
তিনি আরও বলেন, দিনে দুইবার চার লিটারের বেশি দুধ দেয় গরুটি। প্রথম প্রথম সবাইকে টাকা ছাড়াই দুধ দিতাম। গত দুই সপ্তাহ ধরে দুধ বিক্রি শুরু করেছি।
কৃষক হায়দার আলী জানান, তিনি একজন গরিব চাষী। জমি চাষাবাদ করে সংসার চালান। পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। তিন মেয়ের মধ্যে আবেদা খাতুন ষষ্ঠ ও জোবেদা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে মাইসা আক্তারের বয়স আড়াই বছর। গত দুই বছর আগে একটি বিদেশি জাতের গাভী এই বাছুরটিসহ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনেন। পরে তার মেজো মেয়ে বাছুরটির নাম রাখে ‘ময়না’।
গত চার মাস আগে গাভীটি আরেকটি বাছুর জন্ম দিলে তিনি ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় সেটি বিক্রি করেন। আর ময়না নামের বাছুরকে লালন-পালন করে আসছেন। মাসখানেক আগে সেটিকে গোসল করাতে গেলে গরুটির ওলান ফোলা দেখে ধারণা করেন- এর ওলানে দুধ জমেছে।
তিনি তাৎক্ষণিক গরুটির ওলান থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। প্রথম দুই দিন এক লিটার দুধ পান তিনি। এখন চার লিটার, কখনো সাড়ে চার লিটার দুধ সংগ্রহ করেন। বিষয়টি শুনে আশ্চর্য হয়ে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ তা দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করেন।
তিনি বলেন, অনেকেই আমার এই গরুডারে বেশি টেহার লোভ দেখাইয়া কিন্না নিত চাইতাছে। আমি গরিব মানুষ। গরুডা বিক্রি করতাম না। এইডা অহন আমার সোনার হরিণ। প্রত্যেক দিন চার কেজি দুধ বেচি। ৩২০ টেহা পাই। তা দিয়া সংসারের খরচ করি। আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
বাছুর দেখতে আসা নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই গরু লালন পালন করি। কখনো এ রকম বাছুর ছাড়া দুধ দিতে দেখিনি। শুনে তাই দেখতে এসেছি। ঘটনার সত্যতাও পেয়েছি।
স্থানীয় বাবুল মিয়া ও মফিজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত যে গাভী বাচ্চা জন্ম দেয়, সেই গাভীই দুধ দিয়ে থাকে। ২ বছরের বাছুরটি দুধ দেয়, এটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। অনেকেই বিষয়টি শুনে আশ্চর্য হয়েছেন। তাই প্রতিবেশীরা এ দৃশ্য দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান জানান, হরমোনের কারণে এমনটা হয়। অক্সিটোসিন হরমোন যদি বেড়ে যায় তাহলে এরকম বকনা গরু থেকে দুধ আসতে পারে। এটা নিয়ে কৌতূহলের কিছু নেই। যদি এই দুধ স্বাস্থ্যসম্মত হয় তাহলে এটা যে কেউ খেতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর বলেন, এটি হয়, তবে খুবই কদাচিৎ। আমার চাকরি জীবনে এটি প্রথম দেখলাম। এটি হরমোনের কারণে এমনটা হয়। অক্সিটোসিন বা অন্য হরমোন যদি বেড়ে যায় তাহলে বকনা গরু থেকে দুধ আসতে পারে। এটা নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই দুধ পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত। যে কেউ খেতে পারেন।