সুন্দরবন ডেক্স: বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্যটি নামেই ৫০ শয্যার হাসপাতাল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যার নিয়মে। ২০১২ সালে হাসপাতালটি কাগজে কলমে ৫০ বেডে উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ইতিমধ্যে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড চালু করে ৫টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে।
কিন্তু করোনা রোগীরা এখানে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসার জন্য খুলনায় চলে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে মাত্র পাঁচ জন। এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা হচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ড তালাদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পর্যাপ্ত জনবল নেই।
নানা সংকটের মধ্যে এক প্রকার জোড়া তালি দিয়ে চলছে শরণখোলা উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এক মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। করোনা মহামারিতে নানা শুন্যতার মাঝেও রোগীরা সেবা পেলেও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি এবং স্থানীয় কতিপয় দালালদের দাপটে রোগীরা অনেকটা অসহায়।
দালাল সহ ওষুধ প্রতিনিধিদের দৌরত্বের কারনে, বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন রোগীরা। তবে, বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালটি বহু সমস্যা-সংকটে জর্জরিত থাকলেও তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো উদ্দোগ নেয়নি
যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক ও এলাকার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারন মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ১৯৮০ দশকে উপজেলার প্রান কেন্দ্র রায়েন্দা এলাকায় ১৬ বিঘা জমির উপর ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি স্থাপন করেন তৎকালীন সরকার। তবে, ৫০ শয্যায় উন্নিত হওয়া এ হাসপাতালটিতে কনসালটেন গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ সহ ১৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা।
কিন্তু সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ মাত্র ৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়া ও প্যাথলজিষ্ট সংকট রয়েছে । এক্স-রে ১৪ বছর এবং ইসিজি মেশিন ৭ বছর ধরে নষ্ট। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) যন্ত্রপাতি থাকলেও সেখানে কোনো অপারেশন হয় না। থিয়েটারটি ব্যবহার না হওয়ায় সরকারের কোটি টকা মূল্য মানের যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে, বহিরাগত রোগীদের কয়েক জন বলেন ,ডক্তার আসার পর কোম্পানির লোক গুলো যে ভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাতে আমরা আতকে উঠি। ডাক্তার দেখানোর সময় বাহিরের লোক পাশে থাকলে লজ্জায় গোপন সব রোগের কথা বলা যায় না। এছাড়া স্থানীয় এক সমাজ সেবক বলেন, নিদিষ্ট সময়ের আগে হাসপাতালে ঢুকে অযথা রোগীদের হয়রানি করা তাদের পেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখা নিয়ম বর্হিভুত।
করোনা দুর্যোগের মধ্যে রোগী ও তার স্বজনদের ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা যে ভাবে হয়রানি করেন তা এক ধরনের অপরাধ। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.ফরিদা ইয়াসমিন জানান, হাসপাতালটি ৫০ বেডে উন্নিত হওয়ার পর নার্স ও রোগীদের খাবারের বরাদ্ধ পাওয়া গেলেও এ পর্যুন্ত প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দুপুর ২টার পরে সময় দেওয়া হয়েছে। তবে, কেউ রোগী দেখার টাইমের মধ্যে সাক্ষাৎ করতে আসলে সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া, জনবল সহ নানা সংকটের কথা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।