বাংলাদেশে গো-খাদ্যের খুব অভাব রয়েছে। দেশে চারণ ভূমির পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকার ফলে চারণ ভূমিতে গবাদিপশু চরে যৎসামান্য পরিমাণে কাঁচা ঘাস খেতে পারে। কৃষক ভাইয়েরা ফসলা জমিতে ঘাস চাষ করে গরুকে খাওয়াতে তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
আবার বাংলাদেশে গম ও ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন মোটেও আশানুরূপ নয়। ফলে ভূষি উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম হয়। এ কারণে বাজারে ভূষির দাম সবসময় অত্যধিক থাকে। তবে আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমন খড় ও দেশী ঘাস সে তুলনায় বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হলেও কৃষক ভাইয়েরা সে সবের সংরক্ষণ পদ্ধতির বিষয়ে তেমন ওয়াকিবহাল নন। ফলে এ জাতীয় খাদ্যের উদ্বৃত্ত অংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়।
দেশে প্রতি বছর বন্যাতেও প্রচুর পরিমাণে গো-খাদ্য বিভিন্নভাবে বিনষ্ট হয়।ধান কাটার সময় কিছু এলাকার কৃষক ভাইয়েরা ধান গাছের ৬-৮ ইঞ্চি উপরে না কেটে প্রায় ১-১১২ ফুট উপর থেকে কেটে নেয়। ফলে খড়ের উৎপাদন স্বভাবতই কম হয়। তাই ভিজা খড় ও কাঁচা ঘাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতির উপর কৃষক ভাইদের সম্যক জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন।
আমাদের দেশে গরুর প্রধান খাদ্য হল খড়। বর্ষাকালে ইরি-বোরো ও আউশ ধানের খড় বেশির ভাগ ভিজে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ পচনশীল খড় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা হলে দেশে গো-খাদ্যের চাহিদা অনেকটা পূরণ হতে পারে। ইউরিয়া সহযোগে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি নিম্নে বর্ণিত হলো।
প্রতি ১০০ কেজি খড়ের জন্য ১.৫-২.০০ কেজি ইউরিয়া সার এবং আচ্ছাদন দেয়ার জন্য পলিথিন পেপার।
৭-১০ দিন পর গাদা থেকে খড় বের করার পর কিছুক্ষণ ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে তারপর খাওয়াতে হবে। এর ফলে গাদায় উৎপাদিত এমোনিয়া গ্যাস বের হয়ে যায়। এ খড়ের সাথে শতকরা ৪০ ভাগ হারে সাধারণ শুকনা খড় মিশিয়ে খাওয়ালে এমোনিয়াজনিত কোনো বিষক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে না।
এই খড়ের গাদা প্রয়োজনে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনের সময় গরুকে খাওয়ানো যায়। ভিজা খড় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যদি খড়ে বেশি পানি থাকে তবে কিছুক্ষণ উঁচু জায়গায় রাখলে পানি কমে যাবে অথবা এই খড়ের সাথে স্তরে স্তরে শুকনা খড় মিশানো উচিত। খড়ের গাদা ঢাকার জন্য ছেঁড়া বা ফাটা পলিথিন ব্যবহার করা যাবে না। গাদা এমনভাবে ঢেকে রাখতে হবে যাতে এর ভিতর বাতাস বা পানি প্রবেশ করতে না পারে।
আমাদের দেশে বর্ষাকালে দূর্বা, বাকসা, আরাইল, সেচি, দল, শস্য ক্ষেতের আগাছা ইত্যাদি জাতীয় কাঁচা ঘাস প্রচুর পাওয়া যায় অথবা জমিতে চাষ করা নেপিয়ার, পারা, ভুট্টা, সরগম, ওট ইত্যাদি খুব সহজেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাইলেজ করে ১ বছর পর্যন্ত পশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
১০০ ঘনফুট একটি মাটির গর্তে ২.৫-৩.০ মেট্রিক টন ঘাস সংরক্ষণ করা যায়।
১০০ কেজি কাঁচা ঘাসের জন্য ৩-৪ কেজি চিটা গুড়, চিটা গুড়ের সমপরিমাণ পানি, শুকনা খড় ও পলিথিন কভার।
এই ঘাসের গাদা ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। কিছু দিন পর ঘাসের রং বিবর্ণ হলেও তা খাওয়ানোর উপযোগী থাকে। চিটাগুড় পাতলা হলে পরিমাণ বাড়িয়ে পানি কম করে মেশাতে হবে।
বর্ষাকালে ভুট্টা সংগ্রহ করার পর ভুট্টার গাছ শুকিয়ে দা দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে বস্তায় বেঁধে রেখে দিলে বর্ষা বা বন্যার সময় আপদকালে গরুকে খাওয়ানো যায়। ভুট্টা গাছের টুকরা পানিতে ভিজিয়ে চিটাগুড় দিয়ে মাখিয়ে দিলে গরু খায়।
শুকনো খড়ের সতূপে খড়ের গুণগত মান ভালো আছে কিনা তা মাঝে মধ্যে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কারণ, সতূপ (পালা) তৈরির সময় কোনো ত্রুটি থাকলে বর্ষাকালে সতূপের ভিতর পানি ঢুকে খড় পচে যেতে পারে। ঐ পচা খড় গরুকে খাওয়ালে বিষক্রিয়া বা ডায়রিয়া হতে পারে।
বর্ষাকালে ভূষি ও চাউলের কুড়ার বস্তার মুখ খুব ভালো করে বেঁধে ঘরের মাচার উপরে রাখতে হবে। দানাদার খাদ্যের বস্তা কখনও মাটিতে রাখা যাবে না। অবশ্যই মাচার উপর শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে। তা না হলে এতে ছত্রাক জন্মাবে। এ জাতীয় খাদ্য খেলে গবাদিপশু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
এ সমস্ত কারণে গবাদিপশুকে খাদ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সজাগ হতে হবে।গবাদিপশুর উৎপাদন ও দৈহিক ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য যথারীতি সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও গর্ভবতী গাভীর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান গবাদিপশু সহজে বিশেষ করে পুষ্টিহীনতা, পেটের পীড়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় না।এজন্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গো-খাদ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
সুত্রঃ আকৃ, ঢাকা