সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের পথে রাজশাহীর পোলট্রি শিল্প। রাজশাহীতে এ বছরের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে চার দফা। একই সাথে বেড়েছে ভ্যাকসিন ও বাচ্চার দাম। অপরদিকে খামারে শ্রমিকের মজুরি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। এর ফলে পোলট্রি পণ্যের দাম না পেয়ে লোকসানে পড়ছেন খামারিরা।
খামারিরা বলছেন, খাদ্যের ডিলার আর ওষুধের দোকানে বকেয়ার পরিমাণে হয়ে দাঁড়িয়েছে পোলট্রি ব্যবসা। এজন্য সিন্ডিকেটকেই দুষছেন তারা। ইতোমধ্যে রাজশাহীর ৪৫ শতাংশ পোলট্রি মুরগির খামার লোকসানে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানায় রাজশাহী পোলট্রি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পুঠিয়া, দুর্গাপুর, তানোর ও বাগমারা উপজেলায় দেড় হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে লোকসান হয়েছে পুঠিয়ার খামারিদের। এ উপজেলায় গত এক বছরে প্রায় ৫০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারি ঋণের দায়ে পথে বসেছেন। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে মুরগি পালনের শেডগুলো, নষ্ট হচ্ছে লাখ টাকার কাঠামো।
লেয়ার মুরগির খামারি সৈয়দ আলী বলেন, যখন আশানুরূপ ডিম দেয়া শুরু হয়, তখন ডিমের বাজার পড়ে যায়। ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ১০০ টাকা হয়ে যাওয়ায় কয়েক মাস চালিয়ে খামার বন্ধ করতে হয়। এভাবে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমার। আমার মতো অনেক খামারি এভাবে লোকসান করে পথে বসেছেন।
বসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে বাচ্চা, খাদ্য, মুরগির চিকিৎসা ও শ্রমিকের মজুরির ব্যয় অতিরিক্ত বেড়েছে। অথচ মুরগির ডিম বা মাংসের দাম তুলনামূলক কম। এখন আগের মতো মুরগি পালনে তেমন লাভজনক নয়। অনেক খামারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে ব্রয়লার ও সোনালি পালন করছেন। আর হাতেগোনা দু-চারজনের লেয়ার খামার রয়েছে। সবই সিন্ডিকেটের কাজ।
রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, কয়েকটি বড় কোম্পানি পোলট্রি খাতে বিনিয়োগ করেছে। তারা ইচ্ছামতো খাদ্যের দাম বাড়ায়। কারণ তারা নিজেরাই খাদ্য, বাচ্চা, মাংস ও ডিম উৎপাদন করে। আর এর বাইরে যেসব খামারি থাকেন তাদের ডিলাররা চুষে খায়। বছরে দুবার মুরগির মাংস ও ডিমের দাম বাড়ায় তারা যাতে নতুন খামারি তৈরি হয়।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অফিসার আখতার হোসেন বলেন, সারা দেশেই একই রকম অবস্থা। পোলট্রি খাদ্য তৈরি হয় ঢাকায়, ফিড মিলের সবগুলোই তাদের হাতে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এটি নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় নেই।
সূত্রঃ শেয়ারবিজ