ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামকরণে যা করা যাবে না
কথায় আছে, “প্রথমে দর্শনদারী, পরে গুণবিচারী” অর্থ্যাৎ মানুষ প্রথমে দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়। আসলেই একটি মানুষকে জানতে বা বুঝতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। তবে কথা শুরু করার জন্য বা সেই মানুষটির প্রতি আকর্ষন অনুভবের জন্য তার বাহ্যিক রূপ, ব্যবহার, পোশাক পরিচ্ছেদ গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামও গুরুত্বপূর্ণ। নামকে কেন্দ্র করেই তাকে নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের দিকে যদি খেয়াল করি, তবে দেখতে পারবো আমরা প্রতিষ্ঠানের নাম জানি, পণ্য সমন্ধে জানি কিন্তু কে তার প্রতিষ্ঠাতা সেটা জানি না।
বর্তমানে কে মালিক তাও জানি না। যুগের পর যুগ সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামটাই বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ে। যেমন ‘বসুন্ধরা গ্রুপ’। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এই কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য মানুষ ব্যবহার করে।
কিন্তু শতকরা ১০% মানুষও এই কোম্পানির মালিকের নাম বলতে পারবে না। তাদের কিন্তু ব্রান্ডকে সবাই চিনে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নাম এতটাই গুরুত্ব বহন করে।
নাম অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত। ব্যবসা প্রতিষ্ঠাানের সাথে যায় না এমন নাম কিছুটা নেতিবাচক প্রভাবই ফেলে। যেমন, অর্থনৈতিক কোন প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে ‘রঙ’ শব্দটি কিন্তু যায় না। কিন্তু আবার ‘স্বপ্ন’ শব্দটি যায়।
যেমন কোন ঋণ কোম্পানি বা ব্যাংকিং কোন শাখার নাম ‘স্বপ্নপূরণ’ দেওয়া যেতে পারে। আবার ‘রঙয়ের ছোয়া’, ‘রঙ মশাল’ এসব নাম কিন্তু কাপড় সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে বেশ ভাল যায় । তাই পন্য বা সেবার সাথে যায় এমন নাম নির্বাচন করতে হবে।
নাম নির্বাচন নিয়ে অনেক কিছু জানার আছে। আপনি চাইলে প্রিয় মানুষদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আবার বিভিন্ন ওয়েব সাইটে নাম নির্বাচনের জন্য ফ্রি সার্ভিস নিতে পারেন। তবে পরামর্শ যতই করুন, সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই।
আসুন ব্যবসার নাম নির্বাচনে আমাদের কি কি বিষয় করা উচিত না তা একটু জানার চেষ্টা করি।
কখনোই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠনের নাম ব্যবহার করবে না। মানুষ যাচাই বাছাই করে অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্বের কোম্পানি সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তাদের প্রতি সহনুভুতিশীল হবে।
আর আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করবে। সুতরাং আপনি বড় ক্ষতির সমুখীন হতে পারেন। তাই এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আপনি একই রকম ব্যবসা করছেন হয়তো কিন্তু বাজারে প্রসিদ্ধ কোম্পানির নামের সাথে নিজের কোম্পানির নাম মিলিয়ে রাখবেন না। এতে করে আপনি কখনোই নিজস্ব পরিচিতি পাবেন না। যেমন আমি যদি একটি ইলেকট্রনিক কোম্পানি শুরু করি এবং নাম দেই ‘Walton24’।
আমি মূলত চাইছি ‘Walton’ কোম্পানির ব্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগাতে। কিন্তু এর ফলাফল হবে মারাত্মক।
মানুষ কিছুদিনের মধ্যেই যাচাই বাছাই করে আমার কোাম্পানিকে অপছন্দ করতে শুরু করবে। আবার আমার পণ্য কিনলেও নাম কিন্তু ‘Walton’ কোম্পানিরই হবে।
আমি কিছুতেই আমার নিজস্ব ব্রান্ড ভ্যাল তৈরী করতে পারবো না। খুব দ্রুত আমাকে মার্কেট ছাড়তে হবে। একটি নামের কারণে আমি হারিয়ে ফেলবো আমার স্বপ্নকে।
আপনার যদি নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন থাকে তবে নিজের বা ছেলে মেয়ের নামে নাম না দেওয়াই ভাল। এলাকা ভিত্তিক ব্যবসা হলে নাম দিতে পারেন। কারন তখন মানুষ আপনার নাম জেনে প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে।
কিন্তু যদি আপনার লক্ষ্য থাকে সারা দেশ এমনকি বিদেশেও নিজের ব্যবসাকে নিয়ে যাওয়ার, তবে এক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার সাথে যায় এমন নাম বেছে নিন। দেশী বিদেশী বড় বড় কোম্পানির দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, এসব কোম্পানির মালিকেরা তাদের নিজস্ব নাম কখনোই ব্যবহার করেন নি।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ কিন্তু তার নিজের নাম বা প্রিয় মানুষের নাম বেছে নেন নি। এমন নামই নিয়েছেন যা তার কাজের সাথে যায়। বিল গেটস তার কোম্পানির নাম রেখেছেন মাইক্রোসফট। নিঃসন্দেহে বহুজাতিক কম্পিউটার প্রযুক্তি উৎপাদন কোম্পানির সাথে এই নামটি বেশ মানাসই।
পড়ুন- নিজের নামে ব্যবসার নাম দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত
কঠিন কঠিন নাম ব্যবহার না করাই ভাল। এতে করে ক্রেতা আকর্ষন হারাতে পারে। ছোট, সুন্দর, সহজ বানানের প্রতি মনযোগী হতে হবে। অপ্রচলিত শব্দ যার অর্থ অনেকে বুঝবে না এমন নাম না দেওয়ার চেষ্টা করুন। ক্রেতার যত কাছাকছি আপনি পৌঁছাতে পারবেন, ততই আপনি লাভবান হবেন।
বড় নাম কোম্পানির জন্য না দেওয়াই ভালো । চেষ্টা করুন ছোট কোন নাম দিতে। যেন ক্রেতা মনে রাখতে পারে সহজেই। একজন ব্যবসায়ী হিসাবে আপনার লক্ষ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছানো এবং ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা ও ধরে রাখা। একটি সুন্দর নাম আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রেতার দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
নাম নির্বাচনের পর প্রথম কাজ হবে ডোমেইন খালি আছে কি না সেটি পরীক্ষা করা। এখন প্রয়োজন না থাকলেও অদূর ভবিষ্যৎতে প্রয়োজন হতেই পারে।
আগাম প্রস্তুতিই তাই বুদ্ধিমানের কাজ। নেমচিপ ডোমেইন নেম সার্চ, নেম ইত্যাদি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে আপনি সেই নামের ডোমেইন খালি আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করতে পারেন।
সার্চ বক্সে দোকান বা প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে সার্চ করুন। চেষ্টা করবেন ডট কম ডোমেইন নিতে। ডট ইনফো, ডট নেট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন থাকলেও ডট কম ক্রেতার কাছে মনে রাখতে তুলনামূলক সহজ হবে।
সময়ের আবর্তনে এয়ারটেল কোম্পানি বর্তমানে রবি কোম্পানি আওতাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু মানুষের কাছে এখন এর গ্রহনযোগ্যতা আছে বলেই, রবি কোম্পানি কিন্তু নামটি এখনো পরিবর্তন করে নি। নামের মূল্য এমনই।
মালিক বদলে গেছে, বদলে গেছে কর্মী, ঠিকানা, ব্যবসায়িক পলিসি। কিন্তু নামটি এখনো সমুজ্জল। এখানেই নামের সার্থকতা। আপানর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে রাখতে আপনাকে অবশ্যই একটি সুন্দর নাম খুঁজে বের করতে হবে।
এমন নাম যার নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, নিজস্ব বৈশিষ্ঠ্য আছে। অন্ধ অনুকরন কোন ভাবেই ভাল ফলাফল এনে দেয় না। একটি নাম থেকেই কোম্পনির পরিচিত, ব্যান্ড ভ্যালু, নিজস্বতা তৈরী হয়। ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল – Bangla Preneur YouTube Channel