টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: প্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে ফিট রাখতে খুব সহজেই হাই-টেক ফিটনেস অ্যাপগুলোর সাহায্য নেয়া যায়। কিন্তু অ্যাপগুলো কি ব্যক্তিগত মানব প্রশিক্ষকের মতোই কার্যকর?
চার বছর আগে জেনি উয়েনার ফিটনেসের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি সেসময় নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি করতে চাইলেন। তবে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তার পরিশ্রম খুব একটা কাজে আসছিলো না। জিমে যাওয়ার পর প্রায় সময়ই তাকে কঠিন ব্যায়ামগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতো ‘সহজ’ অপশন দেয়া হতো। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতপ্রশিক্ষকের শরনাপন্ন হওয়া যায়, কিন্তু সেখানেও সমস্যা। কারন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক নিয়োগ করতে হলে মোটা অর্থ গুনতে হয়; যাদের খরচ শুরুই হয় ঘন্টায় ৩০ ডলারে। এমন পরিস্থিতিতে ফিটনেস অ্যাপ ফ্রিলেটিকসের সন্ধান পান সেন্ট অ্যালবানসে ইভেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ওয়েনার।
এই অ্যাপটি ব্যবহারের সময় শুরুতেই ব্যবহারকারীর পূর্বের প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতার তথ্য , অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো এবং লক্ষ্যসমূহ তুলে ধরতে হয়। এরপর একজন ভার্চুয়াল কোচ এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে আপনার জন্য একটি নিজস্ব প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করে দিবেন। প্রতিটি ব্যায়াম শেষে এর উপযোগিতা ও সমস্যা সম্পর্কে জানতে চেয়ে ব্যবহারকারীকে প্রশ্ন করে ফ্রিলেটিকস অ্যাপ। বিশ্বব্যাপি পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে ফ্রিলেটিকসের। সব ব্যবহারকারীকেই এ ধরনের প্রশ্ন করা হয়; তাদের দেয়া উত্তর পরবর্তী প্রশিক্ষণ সেশনে সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করে অ্যাপটির এআই সফটওয়্যার।
এ প্রসঙ্গে ওয়েনিয়ার বলেন, ‘এআইয়ের বিষয়টিই আমাকে সর্বপ্রথম আগ্রহি করে তুলেছে। এর আগে আমি প্রতিদিন জিমে যেতাম কিন্তু কোন ফলাফল পাই নি। যখন আমি ফ্রিলেটিকসের সন্ধান পেলাম আমার মনে হলো ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক পকেটে নিয়ে ঘুরছি।’ তিনি আরো জানান, ব্যায়ামের ফলাফলে আমি খুবই উচ্ছাসিত। এই অ্যাপের সাহায্যে আমি ২৫ কেজির বেশি ওজন ঝরিয়েছি।’
ফ্রিলেটিকসের ডিজিটাল পার্সোনাল অ্যাপটিকে ‘দ্যা কোচ’ বলা হয়; সপ্তাহে এর খরচ পরে ১ দশমিক ৭৮ ডলার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ‘প্রোডাক্ট ও টেকনোলজি’ অফিসার কর্নিলাস ব্রানার বলেন, ব্যবহারকারীরা আরো বেশি ফিডব্যাক দেয়ার কারণে এটি ‘আরো ভালো হয়ে’ উঠছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি অ্যাপ কি ব্যক্তিগত মানব প্রশিক্ষকের মতো আপনাকে জিমে যেতে অনুপ্রাণিত করবে? স্পোটর্স ও ফিটনেস সাইকোলজিস্ট অ্যান্থনি পাপাথমাস বলেছেন এ ধরনের অ্যাপগুলো মানব প্রশিক্ষকের বিকল্প হতে পারে না। লাফব্রু ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্ট অ্যান্ড এক্সারসাইজ মেডিসিনের জেষ্ঠ্য লেকচারার বলেছেন, ‘একটি আন্ত:সম্পর্কের সঙ্গে আপনি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারেন। আপনি যদি সেশনটি নিয়ে মুগ্ধ না হন অথবা আপনার মনমানসিকতা ঠিক না থাকে তাহলে ব্যায়ামের ধরনও পরিবর্তন হবে। আমি নিশ্চিত নই যে আপনাদের ফোনে কোন ধরনের অ্যালার্ট আসে, একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের বাইরে আগ্রহের ক্ষেত্রেই বেশি জোর দেই।’ তিনি আরো জানান, ‘মানব প্রশিক্ষকরা সম্ভবত আমরা যা উপভোগ করি তার ওপর জোর দেয়।
ব্রাইটনের মার্কেটিং কনসাল্টেন্ট টম বোরলেট ফিটনেসএআই ব্যবহার করেন। ফ্রিলেটিকসের মতো এই অ্যাপটিও তাদের সব প্রশিক্ষণ উন্নত করতে ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করে থাকে। তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রায় সময়ই ব্যায়ামের সময় তথ্যগুলো ব্যবহার করি। আপনি অব্যাহতভাবে অগ্রগতি করছেন তা নিশ্চিত করতে এটি খুবই উপযোগি।’ সার্বিকভাবে এই অ্যাপটি তাকে মেদ ঝরানোর লক্ষ্যে পৌঁছুতে সাহায্য করেছে। একমাসের মধ্যে ১৯ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি।
ফিটনেসএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মোর বিশ্বাস করেন এআইয়ের ম্যাথমেটিক্যাল সুবিধার কারনে এই অ্যাপ মানব প্রশিক্ষকের তুলনায় ভালো। তিনি আরো বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকদের পেছনে অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। কিন্তু আপনি যখন সরাসরি সেশন করবেন তখন ব্যক্তিগতভাবে তখন ব্যায়াম সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। এতে করে একটি বিষয় নিশ্চিত যে যে ব্যায়ামটি করা হচ্ছে সেখান থেকে আপনি কোনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন না; সত্যিকার অর্থে এ বিষয়টি অ্যাপে পাওয়া যাবে না। এছাড়া অ্যাপ ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বুঝবে না।’
সূত্র: বিবিসি/আরএপি/