কার্প ফ্যাটেনিং এ যে উপায়ে সহজেই লাভবান হওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানি না। বর্তমানে আমাদের দেশের পুকুরগুলোতে ব্যাপকহারে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এসব মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্যহারে কার্প জাতীয় মাছের চাষ করা হচ্ছে। আজকে আমরা জেনে নিব কার্প ফ্যাটেনিং এ যে উপায়ে সহজেই লাভবান হওয়া যায় সেই সম্পর্কে-
যে সব এলাকায় বড় বড় কার্পজাতীয় মাছের চাহিদা এবং বাজার মূল্য বেশি, মূলত সেসব এলাকায় এই চাষটি বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
চাষ পদ্ধতিঃ ছোট পুকুরে কার্পফেটেনিং হবেনা, কমপক্ষে পুকুরের সাইজ এক একর হতে হবে। গভীরতা সর্বনিম্ন ৫ ফুট, দৈনিক ৮ ঘণ্টা রোদ ও সারা বছর পুকুরে পানি থাকতে হবে।
চাষের মেয়াদ কালঃ ৮ থেকে ১০ মাস।
পোনা বাছাইঃ এই পদ্ধতি তে চাষ করতে চাইলে অবশ্যই পোনার সাইজ সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম, সর্বোচ্চ ১ থেকে ১.৫ কেজিও নিতে পারেন। যেহেতু মাছগুলো অতি বড় করে বিক্রি করা হবে, তাই পোনা কেনার সময় বড় জাতের ব্রুড মাছের পোনা ও আন্তঃপ্রজনন মুক্ত দেখে শুনে নিতে হবে। যদি পোনার মান ভাল না হয়, তাহলে কার্পফেটেনিংয়ের উদ্যেশ্য সফল হবেনা। সবচেয়ে ভাল হয়, দেখে শুনে ২/৩” সাইজের পোনা এনে নিজে চাষ করে চাপের পোনা তৈরী করে নেওয়া।
মজুদ ঘনত্বঃ শতকে ১২ থেকে ১৫ টি পর্যন্ত পোনা মজুদ করতে পারেন।
মডেল ১ :- রুই ৫ পিচ, মৃগেল / কালিবাউস ২ পিচ, কার্পু জাতীয় ২ পিচ, সিলভারকার্প ১ পিচ, কাতাল দুই শতকে ১ পিচ, গ্রাসকার্প দুই শতকে ১ পিচ।
মডেল ২ :- রুই ৬ পিচ, মৃগেল / কালিবাউস ৩ পিচ, কার্পু জাতীয় ২ পিচ, সিলভারকার্প ২ পিচ, কাতাল ১ পিচ, গ্রাসকার্প ও ব্লাককার্প দুইশতকে ১ পিচ করে দিতে পারেন। এখানে কার্পু জাতীয় বলতে কার্পু, মিনারকার্প, মিররকার্প, কমনকার্প কে বুঝানো হয়েছে।
খাবার ও চাষ ব্যবস্থাপনাঃ এই পদ্ধতি তে চাষ করলে খাবার খুবই কম লাগে।
খেয়াল রাখতে হবে পানিতে যেন ফাইটোপ্লান্কটন ও জুওপ্লান্কটনের কোন অভাব দেখা না দেয়।
সম্পূরক খাবার হিসাবে সয়ামিল বা রেপসিড, এ্যাংকর ডাল, আটা, অটোব্রানের মিশ্রণে ২২ থেকে ২৪% প্রোটিন সমৃদ্ধ হাতে তৈরী খাবার দিবেন। মাছের সাইজ ১ কেজি না হওয়া পর্যন্ত দৈনিক দেহের ওজনের ৩% করে দিবেন, আর ১ কেজি পার হলে ২% করে, ৩ কেজি পার হলে বিক্রি না করা পর্যন্ত ১.৫% করে খাবার দিয়ে যাবেন।
প্রতি ১৫ দিন পর পর হাত জ্বাল দিয়ে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। মাসে একবার শতকে ২৫০ গ্রাম চুন, ৩০০ গ্রাম লবন প্রয়োগ করবেন।
সম্ভব হলে মাসে একবার প্রোবায়োটিক ব্যবহার করবেন। কার্পমাছ যেহেতু নভেম্বর মাসের পরে গ্রোথ কম হয়। তাই অবশ্যই এপ্রিলের মধ্যে পোনা মজুদ করে ফেলতে হবে। সেজন্য আগে থেকে ভাল জাতের চাপের পোনা তৈরী করে রাখতে হবে।
সঠিক পোনা নির্বাচন করে উল্লেখিত ঘনত্বে ও পদ্ধতি তে চাষ করতে পারলে কমপক্ষে ২ থেকে ৫ কেজি ওজনের মাছ উৎপাদন করতে পারবেন।
লেখাঃ সাঈদ সারোয়ার