আল-আমীন দেওয়ান : সরকারি আইপি কলিং অ্যাপ ‘আলাপ’-এ গ্রাহক বাড়ছে রকেট গতিতে।
শুধু গ্রাহক নয়, ইতোমধ্যে সব ব্যয় তুলে অ্যাপটির লাভের পারদ উঠে চলেছে।
দ্রুত গ্রাহক বৃদ্ধির কারণে অ্যাপের প্রথম নম্বর সিরিজের ১০ লাখ নম্বর এখন ফুরানোর পথে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাণিজ্যিক এবং ৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় আলাপের।
সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এর এই অ্যাপে ইতোমধ্যে প্রায় ৯ লাখ গ্রাহক নিবন্ধন করে ফেলেছেন। কোম্পানিটিও গ্রাহক সামলাতে নতুন নম্বর সিরিজে আরও ১০ লাখ নম্বরের জন্য আবেদনও করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১ সালের মার্চ হতে অক্টোবর পর্যন্ত ৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা আয় করেছে আলাপ। যেখানে লাভ ২ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এতে প্রায় ১৫ কোটি মিনিট কথা বলা হয়েছে ।
এই সময়ের হিসাব অনুযায়ী, সবশেষ মাসগুলোতে গড়ে ৬০ লাখ টাকার মতো আয় করছিলো আলাপ। এই তুলনায় ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ২০২২ সালের জানুয়ারির হিসাব যোগ হলে অ্যাপটির আয় ৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন টেকশহর ডটকমকে জানান, ৮ মাসের মধ্যে আলাপের বিনিয়োগ উঠে এসেছে। তারা লাভও করছেন এটি হতে। অ্যাপটি বিটিসিএলর অন্যতম সফল উদ্যোগ।
বিটিসিএল ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইপিটিএসপি) লাইসেন্স পায়। বছরটির ১৫ অক্টোবর ৯৬৯৬ নম্বর অপারেটর কোড হিসেবে বরাদ্দ পায়। যেখানে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় কোম্পানিটিকে।
এরপর ‘আলাপ’ নামে এই আইপি টেলিফোনি আনে বিটিসিএল। সম্পূর্ণ দেশীয় রিসোর্সে তৈরি করা হয়েছে এই অ্যাপ। দেশীয় কোম্পানি রিভ সিস্টেমস অ্যাপটি তৈরি করে দেয়।
আলাপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমসের গ্রুপ সিইও এম রেজাউল হাসান জানান, সম্পূর্ণ দেশীয় রিসোর্সে নিজস্ব আরএন্ডডি হতে আন্তর্জাতিক মানে অ্যাপটি তারা তৈরি করেছেন। এতে ব্যবহারকীরা দারুণ অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন।
বিটিসিএল বলছে, ২০২১ সালের পরীক্ষামূলক চালুর পর হতে ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অ্যাপটিতে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিলো ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩ জন। যা তাদের প্রথম নম্বর সিরিজ ০৯৬৯৬-এ বরাদ্দকৃত ১০ লাখ নম্বরের কাছাকাছি ।
এতে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যাচাই না করা নিবন্ধিতদের নিবন্ধন বাতিল করে দেন তারা । এটি সংখ্যায় ২ লাখ ৪১ হাজার ৬৯ জন। তখন জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা হয় ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭৪ জন।
এরপর পর তিন মাসে যোগ হয় প্রায় ২৪ লাখ ৫০ হাজার নতুন গ্রাহক। এখানেও দেখা যায় জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অনেকে নিবন্ধিত হয়েছেন।
শেষে যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, ২০২১ সালের মার্চ-ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৯ জন। এতে, ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৬ জন অ্যাপে নিবন্ধিত থাকলেও তারা জাতীয় পরিচয়পত্রে যাচাই করা নন।
দেখা যাচ্ছে, সব মিলে এই সময়ে, অ্যাপটি দিয়ে সাড়ে ৫ কোটি বারের বেশি সফল কল করা হয়েছে। আর ১৭ কোটি ৭ লাখ ৩১ হাজার মিনিট কথা বলেছেন বা ব্যবহার করেছেন গ্রাহকরা।
যদিও রিভ সিস্টেমের হিসাব বলছে, উদ্বোধনের পর অ্যাপটিতে কথা বলা হয়েছে ২২ কোটি মিনিটেরও বেশি। যেখানে গ্রাহকরা রিচার্জ করে খরচ করেছেন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বিটিআরসি জানায়, বিটিসিএলকে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া নিবন্ধিত গ্রাহকের নিবন্ধন বাতিল করতে বলা হয়েছে। এবং সেসব নাম্বার আবার ব্যবহার করবে তারা। এরপর ৯ লাখের বেশি নিবন্ধন হয়ে গেলে বাজারের অবস্থানসহ আনুসাঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় ৯৬৯৭ সিরিজ হতে নম্বর ব্লক দেয়া হবে।
কী আছে আলাপে ?
অ্যাপটি ৫ জন কনফারেন্স করতে পারবেন, এক সেকেন্ডের পালস রয়েছে, আন্তর্জাতিক মানের ইমোজি গ্রাফিক কনটেন্টসহ ম্যাসেজিং সুবিধা, এইচডি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার মানের কল, কল ফরওয়ার্ড, ভিডিও অন ডিমান্ড ও অনলাইন রিচার্জ সুবিধা।
অ্যাপ হতে যেকোনো মোবাইল বা ল্যান্ড নাম্বারে কল করা যায় ও রিসিভও করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইবারের মতো অ্যাপ হতে অ্যাপে বিনামূল্যে কথা বলার সুবিধা তো রয়েছেই।
তবে সম্প্রতি মোবাইল নম্বরে যেনো এসএমএসও পাঠানো যায় সে বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বিটিসিএল এমডি।
আলাপে মোবাইল বা ল্যান্ড নম্বরে কল করতে ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ ছাড়া এখন খরচ ৪০ পয়সা। যদিও এই খরচ কমানোর আবেদন করেছে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো । বিটিআরসি তা যাচাই-বাছাই করে দেখছে।
তবে শুরুতে এর মূল খরচ ৩০ পয়সা ছিলো। তখন ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জসহ সেটি ৩৪ দশমিক ৫ পয়সা মিনিট।
অ্যাপে নিবন্ধন করলে এখন ০৯৬৯৬ কোড নম্বর হবে। আর নতুন নম্বর সিরিজের ক্ষেত্রে হবে ০৯৬৯৭ । পরেরর ছয় ডিজিট গ্রাহকের মোবাইল নম্বরে মিল রেখে থাকে। যেখানে যেকোনো অপারেটর হতে কল রিসিভ করা যাবে।
প্লেস্টোর ও অ্যাপল অ্যাপ স্টোর আইওএসে আলাপ অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। অ্যাপটি ব্যবহার করতে গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ছবি দিতে হবে অ্যাপে।