টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: ইউক্রেনে সামরিক হামলার পাশাপাশি ইউক্রেনের ব্যাংকগুলোয় সাম্প্রতিক সাইবার হামলার জন্যও দায়ী রাশিয়া। ইউক্রেন-রাশিয়ার এই বিবাদের বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কারন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ভালো যোগসূত্র রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের উল্লেখযোগ্য বাজার শেয়ার এবং মার্কিন করপোরেশনগুলোর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে। কিছু কোম্পানি রাশিয়াতেই প্রতিষ্ঠিত কিছু কোম্পানির অন্যস্থানে হেডকোয়ার্টার থাকলেও দেশে উপস্থিতি বজায় রাখে।
উদাহারন হিসেবে রাশিয়ার ক্যাসপারেস্কি ল্যাবের কথা বলা যায়। কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যের একটি হোল্ডিং কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত ক্যাসপারেস্কি অ্যান্টিভাইরাস/অ্যান্টিম্যালওয়্যার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে। কোম্পানিটির আন্তর্জাতিক সদরদফতর থাকলেও রাশিয়ায় যথেষ্ট গবেষণা ও উন্নয়ন সক্ষমতা রয়েছে। এমনকি কোম্পানিটির প্রাথমিক গবেষণা (আরঅ্যান্ডডি) কেন্দ্রটি ২০১৭ সালে ইসরায়েলে সরিয়ে নেয়া হলেও দেশে উপস্থিতি বজায় রেখেছে তারা।
কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ইগুনে ক্যাসপারেস্কির সঙ্গে পুতিন নিয়ন্ত্রিত সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ক্যাসপারেস্কির পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও কোম্পানি ও ব্যাক্তিকে ঘিরে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে এবং বিবাদ আরো বাড়লে তাদেকে আরো নজরদারিতে রাখা হতে পারে।
প্রমান রয়েছে যে ক্যাসপারেস্কির সফটওয়্যার ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার একজন কর্মীর নিরাপত্তা চুক্তির সঙ্গে আপোস করেছিলো। যদিও ক্যাসপারেস্কি ল্যাব জানিয়েছে এসব প্রমান সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় নি।
প্যারালাল ইনকরপোরেশন (যা ২০১৮ সালে কোরেল অধিগ্রহন করেছিলো) ভার্চুয়াল প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে ফোকাস করে। কোম্পানিটির তৈরি প্যারালাল ডেস্কটপগুলো ম্যাকের উইন্ডোজ ভার্চুয়ালাইজেশনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সমাধানগুলোর একটি। কোম্পানিটির প্রাথমিক উন্নয়ন ল্যাব ছিলো রাশিয়ার মস্কো এবং নবোরস্কিতে। রুশ নাগরিক সের্গেই বেলুসভ কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কোম্পানিটির তৈরি প্যারালালস ‘ওদিন’ বিল এবং প্রভেশন অটোমেশনের জন্য একটি জটিল ব্যবস্থা যা পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা; যা ২০১৫ সালে ইনগ্রাম মিক্রোর কাছে বিক্রি হয়ে যায়। তবে এই সিস্টেমের ভেতরে ঠিক কতোগুলো রাশিয়ার কোড রয়ে গিয়েছে তা জানা নেই।
এগুলো শুধু উদাহারনমাত্র। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে রাশিয়ার। এছাড়া সাবকন্ট্রাক্টিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন অনেক ছোট কোম্পানিও রয়েছে।
সফটওয়্যার আইওএস, অ্যান্ডয়েড এবং উইন্ডোজের মতো অনেক মোবাইল অ্যাপও রাশিয়ায় উদ্ভুত। আন্তর্জাতিক পরিসরে সফটওয়্যার ও সেবা শিল্পে অনেক প্রযুক্তি কোম্পানিই আগে রাশিয়া এবং পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপিয় ডেভেলপারদের তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করতো। এসব প্রযুক্তি কোম্পানির অনেকেই রাশিয়ার একজন ডেভেলপার পাওয়ার পাশাপাশি পুনঃবিক্রির চ্যানেল পেতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে।
ইউক্রেনে পুরোদমে সংঘাত সৃষ্টি নিয়ে রাশিয়ার উদ্ভূত অথবা রাশিয়ার নাগরিকদের তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলো উদ্বেগে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার মোবাইল অ্যাপের ক্ষেত্রে কি হবে? রাশিয়ার ওপর যদি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে মোবাইল ডিভাইস স্টোরগুলো থেকে এসব অ্যাপ একেবারেই উধাও হয়ে যাবে। এছাড়া রাশিয়ায় তৈরি অগনিত গেমস ও অ্যাপসও হারিয়ে যাবে।
জেডনেট/আরএপি