বগুড়ায় শুরু হয়েছে মাটি ছাড়াই গাছের চারা উৎপাদন! এমন পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে নেই ক্ষতিকারক ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও পোকামাকড়ের আক্রমণ। গাছের শিকড়ও হয় শক্তিশালী। পচন ধরার আশঙ্কাও নেই। চারা মৃত্যুর হারও অনেক কম।
সম্প্রতি মাটি ছাড়া জমিতে সবজি ও মসলা জাতীয় চারা উৎপাদন করতে এমন পদ্ধতি বা মিডিয়া (মাধ্যম) উদ্ভাবন করেছেন কৃষি গবেষকরা। এই মাধ্যমের নাম কোকোপিট। যা একটি জৈব উপাদান।
জানা যায়, বীজতলা তৈরি, হাইড্রোপনিক্স চাষাবাদ (প্রয়োজনীয় উপাদান পানিতে যোগ করে ফসল উৎপাদন) ও বাড়ির ছাদবাগানে মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃর করা যাবে কোকোপিট। কোকোপিটে খুব সহজেই যেকোনো সবজি বা মসলা জাতীয় চারা উৎপাদন করা যায়। শীতের শুরুতে পেঁয়াজের চারা কোকোপিট মাধ্যমে উৎপাদন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে
গবেষকরা বলছেন, কোকোপিট মাধ্যমে চারা উৎপাদনের হার মাটির তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়াও এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস প্রতিরোধী উপাদান থাকে। কোকোপিট হালকা এবং ঝুরঝুরে হয়। ফলে এটি খুব সহজেই উদ্ভিদের জন্য খাদ্য তৈরিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।
কোকোপিটে দ্রুত পানি ও বাতাস চলাচল করায় গাছের শিকড় দ্রুত বাড়ে। ফলে গাছও দ্রুত বাড়ে এবং স্বাস্থ্যবান হয়। এখানে ক্ষতিকারক ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। এমনকি চারা উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ফলে কেকোপিট ব্যবহার করে রাসায়নিক মুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
কোকোপিট বেশি পরিমাণ জলীয় অংশ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জৈব উপাদান। ফলে এতে নিয়মিত পানি দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়ির ছাদে বাগান করার জন্য মাটির বিকল্প হিসেবে কোকোপিট ব্যবহার করা যাবে। এতে অনেক সুবিধা আছে। কারণ মাটির ওজন অনেক বেশি অন্যদিকে কোকোপিট একদমই হালকা। মাটির বিকল্প হিসেবে রেডি সয়েল তৈরিতেও অন্যান্য জৈব উপাদানের সঙ্গে কোকোপিট মিশ্রণ করা হয়।
কোকোপিটে চারা উৎপাদন করতে ট্রে ব্যবহার করা হয়। একটি ট্রে ব্যবহার করেই ৪-৫ বার চারা উৎপাদন করা সম্ভব। এতে আর্থিকভাবে লাভবার হবেন কৃষক।
বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান সুজা জানান, মাটি থেকে যখন কোনো চারা উঠানো হয়; তখন শিকড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে সবজি ও মসলার জাতীয় গাছের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং চারা মৃত্যুর হার বেশি থাকে। কোকোপিট খুব হালকা হওয়ায় এতে চারার শিকড় নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।