মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৯:১৭ অপরাহ্ন

অভিভাবকহীন শরণখোলা যুবলীগ সম্মেলনের ২০ বছর পার, আজও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি!

  • Update Time : সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২

সুন্দরবন ডেক্স: বাগেরহাটের শরণখোলায় যুবলীগ এখন অভিভাবকহীন। সর্বশেষ সম্মেল হয় ২০০২ সালে ৪ঠা জুলাই। এর পর প্রায় ২০ বছর পার হলেও আর কোনো সম্মেলন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। মাঝখানে ২০১৬ সালে ১৫ জুন ছয় মাসের একটি আহবায়ক কমিটি কার হয়। সেই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু আজও পূর্ণাঙ্গরূপে গঠন হয়নি শরণখোলা যুবলীগ।

এছাড়া, মেয়াদ নেই উপজেলার চারটি ইউনিয়ন এবং ৩৬টি ওয়ার্ড কমিটিরও। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামীলীগের অন্যতম এই সহযোগী সংগঠনটি পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনটির পদপ্রত্যাশীসহ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতে দলটির ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ তারা।

ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যুবলীগ। দলের কোথাও জায়গা না পেয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেকেই। সামনে যখন দলের দুর্দিন আসবে, তখন আন্দোলনের মাঠে কাউকেই খুঁেজ পাওয়া যাবে না। এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা দ্রæত সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের নতুন কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে।

এদিকে, যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ওই আহবায়ক কমিটির যিনি আহবায়ক, তিনি চলে গেছেন মূল দলে। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এ অবস্থায় যুগ্ম-আহবায়কসহ সদস্যরা পড়েছেন আরো বিব্রতকর অবস্থায়। তারা এখন কোন দলের পরিচয় দিয়ে মাঠে নামবেন! সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।

তাছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে যাদের ছাত্রত্ব নেই বা ছাত্রলীগ থেকে যারা সদ্য বিদায় নিয়েছেন সাবেক এসব নেতাকর্মীরাও পড়েছেন ঘোর অনিশ্চয়তায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০২ সালের ৪ঠা জুলাই অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আবুল হোসেন নান্টু ( সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা) সভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা সাধরাণ সম্পাদ নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে সাধারণ সম্পাদক মুক্তা একটি মামলায় করাগারে যান।

এ অবস্থায় ওই বছরের (২০১৬ সাল) ১৫ জুন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী কমিটি ভেঙে উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলনকে আহবায়ক করে ৬মাসের জন্য একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষনা দেন।

অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মুক্তা জেলে থাকার সুযোগে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আসাদুজ্জামান মিলন কেন্দ্রীয় যুবলীগের বিতর্কিত সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে নিজে আহবায়ক হন।

এর পর দুই জন যুগ্ম-আহবায়ক এবং ১৯জন সদস্য মনোনিত করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির ৬ মাসের মধ্যে সম্মেলন করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা থাকলেও তা আর করা হয়নি। এমনকি, বর্তমানে আসাদুজ্জামান মিলন মূল দলের (আওয়ামীলীগ) সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পরও যুবলীগের আহবায়কের পদটি এখনও তার দখলে।

ওই কমিটির যারা সদস্য ছিলেন এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়টিতে ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ফলে, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় সংগঠনটির উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। দলীয় কর্মীদের নিস্ক্রিয়তার কারণে এবছরের ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যুবলীগের পক্ষে শহীদ মিনারে কোনো শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়নি।

টানা তিনবার ক্ষমতায় যে দলটি, সেই দলের ঐতিহ্যবাহী একটি সহযোগী সংগঠনের এমন দুর্দশায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
মেয়াদোত্তীর্ণ আহবায়ক কমিটির ১নম্বর যুগ্ম-আহবায়ক মো. শামীম মুন্সী বলেন, আমরা যারা যুবলীগ করতাম তারা এখন একপ্রকার বেওয়ারিশ অবস্থায় আছি। নিজেও জানিনা আমি এখন কোন দলের লোক। কোথাও পরিচয় দিতে গেলে লজ্জায় পড়তে হয়।

২নম্বর যুগ্ম-আহবায়ক হাসানুজ্জামান জমাদ্দার বলেন, আমি অসুস্থার কারণে এলাকার বাইরে আছি। আমি এলাকায় থাকলে ২১ ফেব্রæয়ারি শহীদ মিনারে অবশ্যই মালা দেওয়া হতো।
তিনি বলেন, নিয়মিত কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীরা সব ঝিমিয়ে পড়েছে। অনিশ্চয়তায় পড়ে দল করার মানসিকতাই হারিয়ে ফেলেছে অনেকে। উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত যুবলীগের সকল ইউনিটের কমিটির মেয়ার উত্তীর্ণ হয়েছে বহু বছর আগে। সামনে নির্বাচন আসছে।

বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করতে হলে দ্রæত কমিটি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হাচান তেনজিন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন করিম সুমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগ থেকে অবসর নেওয়ার পর আমাদের মতো অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী পদ-পদবী না থাকায় রাজনীতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।

জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত এবং দলকে সুসংগঠিত করতে শিগগিরই যুবলীগের নতুন কমিটি করার জন্য জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানাই। যুবলীগের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা অভিযোগ করে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রমূলক একটি মিথ্যা মামলায় জেলে থাকা অবস্থায় আসাদুজ্জামান মিলন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে আহবায়ক কিমিটি করেন।

এর পর থেকে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী দল করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা আরো বলেন, ৬ মাস মেয়াদের আহবায়ক কিমিটি চলছে ৬বছর ধরে। তারপরও নতুন কমিটি করার কোনো উদ্যোগ নেই। ওই অবৈধ কমিটির আহাবয়ক এখন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। এখনও তিনি সেই যুবলীগের আহবায়ক আছেন! এভাবে কোনো সংগঠন চলতে পারে না।

শরণখোলা থেকে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে ঐতিহ্যের সংগঠন যুবলীগ। এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন নান্টু বলেন, শুধু যুবলীগ নয়, দলের কোথাও কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে যার ব্যক্তিগত সার্থ নিয়ে ব্যস্ত। যৌবনের সোনালী সময় আওয়ামীলীগের জন্য উৎসর্গ করেছি। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের হাতে বহুবার হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি।

কিন্তু এখন আমার মতো এমন শত শত ত্যাগী নেতাকর্মীর দলে জায়গা নেই। ঐতিহ্যের সংগঠন যুবলীগ এখন অভিভাবকহীন। দল ক্ষমতায় থাকার পরও মহীদ মিনারে মালা দিতে লোক পাওয়া যায় না। আওয়ামীলীগেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। দলের সর্বস্তরে বহিরাগতরা রাজত্ব করছে।

এমনটা ভাবতেও লজ্জাবোধ হয়। তাই এবং নেতাকর্মীদের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেত অচিরেই আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির আহবায়ক ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলনের বলেন, দীর্ঘদিন যুবলীগের কার্যক্রম না থাকায় ২০১৬ সালে কেন্দ্র থেকে আমাকে আহবায়ক করে দলকে সংগঠিত করার দায়িত্ব দেয়। আমি চারটি ইউনিয়ন ও ৩৬টি ওয়ার্ডের কমিটি করে যুবলীগকে একটি ধুমপানমুক্ত ইউনিট হিসেবে গঠন করেছি।

যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এখন আমি মূল দলের দায়িত্বে আছি। যুবলীগ করার আর সুযোগ নেই। পরবর্তীতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করা হবে।

জেলা যুবলীগের আহবায় সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, দেড়মাস আগে জেলায় যুবলীগের বর্ধিত সভা হয়েছে। ওই সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা আমদের গাইড লাইন দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Recent Posts

© 2023 sundarbon24.com|| All rights reserved.
Designer:Shimul Hossain
themesba-lates1749691102