টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: মানুষের জীবন-যাপন, কাজ ও ব্যয়ের পদ্ধতিতে প্রযুক্তির কল্যাণে অব্যাহতভাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন চলছে। এ অবস্থায় স্থানীয় মুদ্রাগুলোকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করাতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রও এ পথে হাটতে যাচ্ছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে ডলারের সম্ভাব্য ডিজিটাল সংস্করন ‘জরুরীভিত্তিতে’ গবেষণা করার আভাস দেয়া হয়েছে।
ডিজিটাল সম্পদ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেয়া নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘সম্ভাব্য মার্কিন সিবিডিসি (সিবিডিসি মূলত ডিজিটাল অর্থ যা কেন্দ্রিয় ব্যাংকের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়) বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে জরুরীভিত্তি জারি করাকে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করা উচিত।’
জিডিপির দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন গত জানুয়ারিতে তাদের স্থানীয় মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করন বের করেছে। এরই মধ্যে তাদের এই সিবিডিসি লাখ লাখ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জিওরগিয়েভা বলেছেন, প্রায় ১০০ দেশ সিবিডিসি নিয়ে গবেষণা করছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন সিবিডিসি নিয়ে ধারণাগত আলোচনার বাইরে চলে এসেছি এবং এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছি। কেন্দ্রিয় ব্যাংকগুলো তাদের হাত গুটিয়ে নিচ্ছে এবং ডিজিটাল মুদ্রার বিটস ও বাইটসের সঙ্গে নিজেদের পরিচিত করে তুলছে।’
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্ট্রেন স্কুল অব বিজনেসের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ডেভিড ইয়ারম্যাক সিএনএনকে বলেন, এই উপায়ে মুদ্রা ইস্যু করা এখন গোটা বিশ্বের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছে।’ মহামারীর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে নগদ অর্থবিহীন মূল্যপরিশোধ ব্যবস্থার চাহিদা অনেক বেড়েছে। এসময় মূলধারার অনেক বিনিয়োগকারীই বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ঝুঁকছে। ফলে সরকারের ওপরও এ ধারায় গা ভাসানোর চাপ তৈরি হয়েছে।
সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি কী এবং কিভাবে ব্যবহৃত হয়?
মার্কিন কেন্দ্রিয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিবিডিসিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘কেন্দ্রিয় ব্যাংকের মুদ্রার একটি ডিজিটাল রূপ যা সাধারন জনগনের জন্য উন্মুক্ত। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা পেমেন্ট অ্যাপের ডিজিটাল নগদ অর্থের সঙ্গে সিবিডিসির পার্থক্য হলো এখানে ফেডের (ফেডারেল রিজার্ভ) দায়বদ্ধতা থাকবে। অর্থাৎ এটি হবে মার্কিন ডলারের একটি ডিজিটাল রূপ; ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কোন বিনিয়োগ বা পেপল নয়।
ওয়ার্টন স্কুল অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব পেনিসেলভিনিয়ার স্টিভেনস সেন্টার ফর ইনোভেশন ইন ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাহ হ্যামার বলেন, ‘সিবিডিসি মূলত ডিজিটাল অর্থ যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। একটি দেশের মূল মুদ্রাই এর ভিত্তি। সরকারি ডাটাবেস তৈরি করে অথবা সরকারের সঙ্গে কাজ করে এমন অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
সম্ভাব্য সুবিধা ও ঝুঁকি
সিবিডিসি ক্রেতাদেরকে লেনদেনের জন্য অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক, নিরাপদ ও সস্তা বিকল্প এনে দিবে। এর ফলে নগদ অর্থ বহন করার ঝক্কি কমে যাবে এবং অবৈধ লেনদেনও কমে আসবে। এছাড়া কর সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সিবিডিসি বেশি কার্যকর হবে।
তবে প্রযুক্তির প্রতিবন্ধকতা, নিরাপত্তা শঙ্কার পাশাপাশি ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গের মতো কিছু অসুবিধাও রয়েছে এ মুদ্রায়। এর কিছু কাজ কমার্সিয়াল ব্যাংক এবং ক্রেডিট বাজারগুলো সম্পন্ন করার জন্য কিছু উদ্বেগও রয়েছে।
ফেডের জানুয়ারির প্রতিবেদনে সম্ভাব্য সাইবারসিকিউরিটি ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় সিবিডিসির জন্য শক্ত অবকাঠামো প্রয়োজন।
এছাড়াও সিবিডিসি ফেডের স্বাধীনতাকেও হুমকির মুখে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই এজন্য নতুন কিছু নীতিমালাও গ্রহন করতে হবে।
সিএনএন/আরএপি