বাবুরি শাক বা বাবুশাক। স্থানীয় নাম বাবুরি। গুলদানি বা গুলচিনি নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। ইংরেজি নাম: Garland chrysanthemum, crown daisy, chrysanthemum greens, edible chrysanthemum, chop suey green, Japanese-green ইত্যাদি। বৈজ্ঞানিক নাম Chrysanthemum coronarium
বাবুরি শাক গাছ ১০০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কাণ্ড খাড়া ও সোজা। প্রচুর ডালপালা গজিয়ে গাছ ঝোপাল হয়। ছোট ও কচি গাছের পাতা কম চেরা হয়, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের পাতার কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা বা চেরা হয়। ফুলের রঙ সাধারণত হলুদ, তবে হলুদ কেন্দ্রবিশিষ্ট সাদা রঙের ফুলও ফোটে। ফুল দেখতে অনেকটা ডেইজি বা চন্দ্রমল্লিকা ফুল বলে ভ্রম হয়।
ফুলের মাঝখানে চাকতির মতো, চাকতির চারদিকে রশ্মির মতো পাপড়ি ছড়ানো। পাপড়ির অগ্রভাগের রং হালকা। ফুলের পাপড়ির ব্যাস প্রায় ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। ফুল থেকে বীজ হয়। শীতকালে চাষ করা হয়। গাছে ফুল আসার আগে কয়েক দফায় পাতা ও ডগা তুলে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। বাবুরি শাকের পাতা শাক হিসেবে রান্না করে মাছের ঝোলে দিয়ে খাওয়া হয়। বিদেশে পাতা দিয়ে স্যুপ তৈরি করা হয়। গাছে ফুল ফুটলে আর শাক খাওয়া যায় না।
বাবুরি শাকের পাতা ও ফুলে মৃদু সুঘ্রাণ আছে। তাই এ শাকের পাতা শুকিয়ে অথবা ফোটা ফুলের কুঁড়ি দিয়ে স্বাস্থ্যকর সুগন্ধী চা বানানো যায়। চীনে এ চা জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে রোগীকে খাওয়ানো হয়। বাবুরি শাকের গাছের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান ক্যাম্পেস্টেরল থাকায় তা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সিফিলিস ও গনোরিয়া সারানোতেও এ গাছের বাকল ব্যবহার করা হয়। ফসলের শিকড়ে গিঁট রোগের কৃমি নিয়ন্ত্রণেও এ গাছ বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাবুরি শাকের উৎপত্তি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়া। ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়ার বহু দেশে বাবুরি শাক বিস্তৃত। চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, উত্তর আমেরিকা প্রভৃতি দেশে বাবুরি শাক চাষ করা হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশ, দিল্লি, কর্নাটকের কিছু অংশ ও নাগপুরে বর্তমানে বাবুরি শাকের চাষ সীমাবদ্ধ। পঞ্চাশের দশকে এ গাছ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে শাক হিসেবেই চাষ করা হতো।
আমাদের দেশে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায় এখন এই পুরনো শাকের চাষ স্বল্পাকারে করা হয়। সেখানে এ শাক খুবই জনপ্রিয়। তবু চাষ না বাড়ায় এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশে বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
লেখক : মৃত্যুঞ্জয় রায়