সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত রামপালে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন শরণখোলায় বিআরডিবির নবনির্বাচিত পরিষদের শপথ ও দায়িত্ব গ্রহন শরণখোলায় দিনব্যাপী উদ্যোক্তা সমাবেশ ও প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত শরণখোলায় শ্রেণীকক্ষ থেকে ২০০ এ্যান্ড্রয়েড ফোন উদ্ধার! মোরেলগঞ্জে নিখোঁজ ড্রেজার শ্রমিকের লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে খালে পড়ে ড্রেজার শ্রমিক নিখোঁজ চুরি হয়েছিল গর্ভবতী গাভি, ৫ মাস পর বাছুরসহ ফেরত দিলো চোর! মোরেলগঞ্জে স্কুল শিক্ষিকার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা মোরেলগঞ্জে সরকারি রাস্তা কেটে ৫ বছর ধরে ঘেরে পানি তুলছেন প্রভাবশালী

দেশি মুরগি পালন কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা | Adhunik Krishi Khamar

  • Update Time : রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২
দেশি মুরগি পালন কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা


বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবার দেশী মুরগি পালন করে থাকে। এদের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির চেয়ে কম। উৎপাদন ব্যয়ও অতি নগণ্য। এটি অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মাংস ও ডিমের মূল্য বিদেশী মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশী। দেশী মুরগির মৃত্যুহার বাচ্চা বয়সে অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে উৎপাদন আশানুরূপ নয়।

বাচ্চা বয়সে দেশী মোরগ-মুরগির মৃত্যুহার কমিয়ে এনে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবস্থা করলে দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করা সম্ভব । মুরগি পালন হচ্ছে এমন একটি ব্যবসা যেখানে অল্প দিনে ভালো আয় করা সম্ভব। মুরগির ডিম ও গোশত শুধু সুস্বাদু নয় আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য। মুরগি পালন করলে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

কেন মুরগি পালন ( murgi palon ) করবেন : মুরগির ডিম ও গোশত পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। অল্প টাকা বিনিয়োগ করে অধিক আয় করা যায়। মুরগির বিষ্ঠা জৈব সারের একটি ভালো উৎস। বিচরণের সময় মুরগি পোকা-মাকড় খেয়ে তা দমন করতে সহায়তা করে। বাজার সম্ভাব স্থানীয় বাজার ছাড়াও বড় বড় হাট-বাজারে মুরগি বিক্রি করা যায়। মুরগির ডিম প্রতিবেশীদের কাছে, স্থানীয় দোকানে বা বাজারে পাইকারি বা খুচরা বিক্রি করা যায়। এছাড়া থানা সদরের হোটেলগুলোতেও ডিম বিক্রি করা যায়।

জাত নির্বাচন : প্রথমে আসি মুরগির জাতে। ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। ইদানীং বনরাজা, গিরিরাজা, গ্রামরপ্রিয়া ইত্যাদি জাত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

ঘর তৈরি : মুরগির জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X ১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। প্রতি ১০-১৫টি মুরগির জন্য এইরকম একটি করে ঘর তৈরী করতে হবে ।

খাবার : বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়।

পরিচর্যা করা : ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান : মুরগি পালনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা রাণীক্ষেত রোগ, এ রোগের প্রচলিত নাম চুনা মল ত্যাগ। পাখি হা করে ঠোঁট তুলে শ্বাস নেয়। ঝিমুনী ও ধীরে ধীরে পক্ষাঘাত হয়। বড় মুরগির নাকে শব্দ হয়। ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত এই রোগটি মুরগির শ্বসনতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষ আক্রমণ করে।

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ সমূহ;-

  • মুরগী খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
  • মাথা নিচু ও চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে।
  • সাদা চুনের মত পাতলা মল ত্যাগ করে।
  • নাক দিয়ে সর্দি ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে।
  • শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয় এবং হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
  • ঘাড় বেঁকে যায়, কখনও কখনও একই স্থানে দাঁড়িয়ে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
  • মুরগী দূর্বল হয়ে ঠোঁট ও বুক মাটিতে লাগিয়ে বসে পড়ে।

রাণীক্ষেত রোগের প্রতিরোধ ও চিকিতসা :

  • প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ এ রোগের হাত থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়।
  • রোগাক্রান্ত মোরগ-মুরগীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য উচচক্ষমতা সম্পন্ন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • আক্রান্ত মুরগীকে অবশ্যই অন্যান্য মুরগীর সংস্পর্ষ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। মরে যাওয়া মুরগী ২-৩ হাত মাটির নীচে পুঁতে ফেলতে হবে।

আরও পড়ুন: দেশীয় পদ্ধতিতে লাভজনকভাবে দেশি মোরগ পালন

অন্যান্য সুবিধাসমূহ :-

  • দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মুরগির গুরুত্ব অপরিসীম। তুলনামূলক স্বল্প বিনিয়োগ এবং অল্প ভূমিতে বাস্তবায়নযোগ্য বিধায় জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • মুরগি পালন, বেকার যুব সমাজ, ভূমিহীন কৃষক এবং দুস্হ গ্রামীন মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্হানের একটি উল্লেখযোগ্য উপায়।
  • দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত। মুরগির মাংস ও ডিম উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। মাংস ও ডিমের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করে এই সমস্যা সমাধান করা যায়।
  • আদিকাল থেকে গ্রাম বাংলার মহিলারা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে মুরগি পালন করে আসছে।
  • মুরগির বিষ্ঠা উন্নতমানের জৈব সার যা ব্যবহার করে কৃষি ফসল উৎপাদনে লাভবান হওয়া যায়।
  • মুরগির পালক দ্বারা খেলার সামগ্রী, ঝাড়- ইত্যাদি এবং রক্ত ও নাড়িভূড়ি প্রক্রিয়াজাত করে পশু-পাখীর খাদ্য তৈরীর জন্য আলাদা শিল্প গড়ে উঠেছে।
  • মুরগির বর্জ্য এবং লিটার ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব যা ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানী সাশ্রয় করে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা যায়।

সর্বসাধারণের আমিষের চাহিদা পূরণকল্পে দেশি মুরগির চাষ বৃদ্ধি করতে হবে. এতে একদিকে যেমন নিরাপদ মাংস উৎপাদন সম্ভব হবে পাশাপাশি কমবে অতি মাত্রায় পোল্ট্রি মুরগির উপর নির্ভরতা।



Source by [সুন্দরবন]]

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Recent Posts

© 2022 sundarbon24.com|| All rights reserved.
Designer:Shimul Hossain
themesba-lates1749691102