ছবি : ইন্টারনেট
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সংশয়বাদীদের সঠিক তথ্য দেয়ার পরিবর্তে অতিমাত্রায় ভুল তথ্য দেয় ফেইসবুক। গ্লোবাল উইটনেসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে ফেইসবুকের অ্যালগারিদম নির্ভরযোগ্য তথ্য না দিয়ে আরো সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। যদিও ফেইসবুক জানিয়েছে ‘ভুল তথ্য কমানো যাবে’ এমনভাবেই তাদের সিস্টেমগুলো তৈরি করা।
ফেইসবুকের এ বিষয়টি বোঝার জন্য গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংশয়বাদী এবং বিশ্বাস করে এমন ব্যাক্তিদের দুটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। অ্যাকাউন্টধারীদের নাম দেয়া হয় জেন এবং জন। এই দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিষ্ঠিত গবেষণাসংস্থাগুলোকে অনুসরন করা হয়। তাদেরকে ফেইসবুক অলগারিদম কি পরামর্শ দেয় সে বিষয়টি বোঝতে তারা ট্র্যাক করা শুরু করে।
এর মধ্যে জেন কিছু কনটেন্ট দেখতে পান যেখানে মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করা হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসে নেয়া পদক্ষেপকেও আক্রমন করা হয়েছে। যেমন-‘সবুজ আন্দোলনকে’ ‘মানবতার দাসত্ব’ বলে অভিযোগ করা পোস্টগুলোতে তাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে এবং জাতিসংঘকে ‘বাগ বানির চেয়ে কম বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পন্ন কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
সিফ্যাক্ট ক্যাম্পাসের মতো আরো কিছু গ্রুপের পোস্টেও তাদের অন্তভুক্ত করা হয়েছে। এই গ্রুপটি জলবায়ুর ওপর মানুষের প্রভাবকে অস্বীকার করে থাকে। এই গ্রুপটি কমিটি ফর এ কনসট্রাকটিভ টুমোরোর একটি অংশ। এটি জলবায়ু বিজ্ঞানের ঐক্যমতের বিরুদ্ধে একটি উদারবাদী ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
জলবায়ু নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ায় এমন পেইজে লাইক দেয়ার জন্য গবেষকরা জেনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। তারা দুইবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। প্রতিবারই তারা এমন একটি পেইজ বাছাই করেন যাদের কমপক্ষে ১৪ হাজার ফলোয়ার রয়েছে এবং এখানে জয়বায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। একটি ধাপে জেন ‘আই লাভ কার্বন ডাই অক্সাইড’ নামের একটি পেইজে লাইক দেন।
২০০৯ সালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জলবায়ু বিজ্ঞানীদের উদ্বৃত করে বলেন, আগামি পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে গ্রীষ্মের কিছু মাসে গোটা উত্তর মেরুর বরফের আস্তরন গলে যাবে।
তবে এটি ছিলো জলবায়ু বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান নিয়ে দেয়া ভুল তথ্য; যেখানে ‘২০১৩ সালের মধ্যে সব বরফ গলে যাওয়ার’ পূর্বাভাস দেয়া হয় নি।
অন্য আরেকটি পোস্টে ইলেক্ট্রিক গাড়ির শক্তির উৎস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘বিশ্বাসের সংকট’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ধরনের পোস্টে লাইক দেয়া শুরুর পর থেকে জেনের অ্যাকাউন্টে আরো বেশি বিজ্ঞান-বিরোধি কনটেন্ট আসতে থাকে।
অন্যদিকে জনের অ্যাকাউন্ট থেকে ইন্টারগভারনমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এবং জাতিসংঘের মতো বিজ্ঞানসম্মত সংস্থাগুলোর পেইজে লাইক দেয়া হয়। এখানে জেনের অ্যাকাউন্টে পাওয়া বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যায়। যেখানে জনকে বিজ্ঞান-ভিত্তিক নির্ভরযোগ্য কনটেন্ট দেখানো হয়।
আইপিসিসি বলছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জনসাধারন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন না করার অন্যতম কারন মিথ্যা তথ্য।
ফেইসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে তারা তথ্যযুক্ত আরো বেশি জলবায়ু কনটেন্ট প্রকাশ করছে। কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বিবিসিকে জানিয়েছে, ভুল তথ্য কমানো হবে এভাবেই আমাদের সিস্টেম ডিজাইন করা। সমস্যাযুক্ত কনটেন্ট শনাক্ত করার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মানুষের তৈরি রিভিউ এবং ফ্যাক্ট চেকারদের সাহায্য নেয়া হয়। কোন কনটেন্টে ভুল আছে তা বোঝতে পারলে আমরা সতর্কীকরন বার্তা যুক্ত করি এবং এর ডিস্ট্রিবিউশন কমিয়ে দেয়া হয় যাতে করে তা কম মানুষের কাছে পৌঁছয়।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে এক মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।
বিবিসি/আরএপি