টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলোকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে দেখা হয়। শুধু তাই নয় এ ধরনের যানবাহনের প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে অনেক ধীর করে দেয়। কিন্তু আমরা আসলে যতটা ভাবছি ইলেক্ট্রিক গাড়ি কি ঠিক ততটাই পরিবেশবান্ধব?
ইলেক্ট্রিক ও হাইব্রিড গাড়িগুলো খুবই কম মাত্রার অথবা একেবারেই বায়ু দূষণ করে না। এর অর্থ হচ্ছে গাড়ি থেকে খুবই গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরনের মাত্রা শূণ্য। এটি নিঃসন্দেহে পরিবেশের জন্য খুবই ভালো। তবে আপনার বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোও কিন্তু পরিবেশ দূষণ করছে এবং কি পরিমান দূষণ করছে তা বোঝতে আরো কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে যেখান থেকে বিদ্যুৎ নেয়া হয় সেই স্থানীয় পাওয়ার গ্রিড, দিনের কোন সময়ে আপনি চার্জ করেন, ব্যাটারি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া এবং আপনার গাড়ি চালানোর ধরন। এই পাঁচটি কারন ইলেক্ট্রিক যানবাহনের পাফর্মেন্সের ওপর প্রভাব ফেলে। আর এসব কারনে পরিবেশের ওপর কতোটা নেতিবাচক প্রভাব পরে তা দেখে নেয়া যাক-
বিদ্যুতের উৎস
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক গাড়িতে শক্তি উৎপন্ন হয়। গ্যাস চালিত গাড়ির মতো এখানে জ্বালানী পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না। ব্যাটারি গাড়িগুলো শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে। হাইব্রিড গাড়িগুলো বাকি সময় গ্যাস ইঞ্জিনে যুক্ত থেকে বায়ুদূষণ কমাতে সিটি ড্রাইভিংয়ের মতো কম চাহিদার ব্যাটারি সেটিংস ব্যবহার করে। বেশিরভাগ হাইব্রিড এবং ইভিগুলোর কিছু ধরনের পুনরুৎপাদনশীল ব্রেকিং রয়েছে; যা ব্যাটারি চার্জ করতে গতিশক্তি ব্যবহার করে এবং ব্যাটারির কার্যক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করে।
কিন্তু এরপরেও ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলো ভিন্নভাবে বায়ুদূষণ করে থাকে। গাড়ি চার্জ করতে ব্যবহৃত গ্রিডে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শক্তি সরবরাহ করা হয় তার মাধ্যমে ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরিত হতে পারে যদি সেখানে জীবাশ্ম জ্বালানীর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তাই ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলোকে পুরোপুরি ‘পরিবেশবান্ধব’ যান হিসেবে তৈরি করতে হলে আমাদেরকে এই গ্রিড পুনঃগঠন করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে গুরুত্ব দিয়ে কয়লা এবং তেলের মতো দূষণমুখী জ্বালানীর উৎসগুলো ক্রমে সরিয়ে দেয়া উচিত। অন্যথায় জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ইলেক্ট্রিক গাড়ির কারনে বায়ু দূষণ হবেই।
চার্জ দেয়ার সময়
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু অঞ্চলে দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চার্জ দেয়ার জন্য বিভিন্ন জ্বালানী উৎস ব্যবহার করা হয়। শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো রাতের বেলা চালানো হয়। এ ধরনের উদ্যেগ আর্থিক জ্বালানী শক্তি কমালেও দূষণ বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলায় পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎস থেকে চার্জ করা হলে দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
স্থানীয় আবহাওয়া
মাত্রাতিরিক্ত গরম এবং ঠান্ডা ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাটারির কার্যক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের চরম আবহাওয়ার অঞ্চলগুলোয় ইলেক্ট্রিক গাড়িতে স্বাভাবিক গড়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি শক্তি প্রয়োজন হয় বলে জানিয়েছে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগ। অন্যদিকে অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে ৪০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়। সব ইলেক্ট্রিক গাড়ি চালানোর জন্য লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ভেতরে এ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে এবং এটি গরম করার মতো সহায়ক বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য আরো বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। আর এই অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার বিপুল দূষণ সৃষ্টি করতে পারে যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহৃত হয়।
অবশ্য ইলেক্ট্রিক গাড়ির প্রযুক্তি ক্রমে আরো আধুনিক হচ্ছে। ব্যাটারিগুলো চার্জ হতে আগের তুলনায় সময় কম নিচ্ছে । আর ব্যাটারি মাত্রাতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে বাঁচাতে ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলোয় কুলিং সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্যাটারি ম্যানুফ্যাকচারিং
ইলেক্ট্রিক গাড়ির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে ব্যাটারি এবং যানবাহন ম্যানুফ্যাকচারিং থেকে সবচেয়ে বেশি দূষণ হয়। সুইডিশ এনভায়রনমেন্টাল ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্যানুযায়ি, একটি ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাটারির জীবনকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ হয় এর উৎপাদন ও যন্ত্রাংশ সংযোজনের সময়ে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ থেকে।
এছাড়া ব্যাটারিতে ব্যবহৃত কোবাল্ট এবং লিথিয়ামের মতো ধাতব উপাদান থেকেও দূষণ হয়। প্রকৃতপক্ষে ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের জন্য খনিজ উত্তোলন এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করার মাধ্যমে জ্বালানীচালিত গাড়ির চেয়েও বেশি বায়ুদূষণ হয়। এছাড়া রেয়ার আর্থ মেটালের জন্য যে প্রক্রিয়ায় খনিজ উত্তোলন করা হয় তা পরিবেশ, বন্যপ্রাণী এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
ইলেক্ট্রিক ব্যাটারির গাড়ি রিসাইক্লিং পরিবেশের জন্য আরো ক্ষতিকর। বর্তমানে একটি ব্যাটারির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখান থেকে উপাদান বের করা এবং নতুন ব্যাটারি তৈরিতে এগুলো ব্যবহার করার প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
ইন্টারনেট/আরএপি