কিশোরগঞ্জ হাওরের ঈদের আনন্দ নেই। আগাম বন্যায় ধান হারিয়েছে কৃষক। হাওরে বন্যা আতঙ্কে ধান রক্ষা করতে আধা-পাকা ধান কেটে ফেলেছে কৃষক। মহাজনী ঋণ পরিশোধ আর পরিবারের সারা বছরের ভরণ-পোষণ নিয়ে অজানা আতংকে হাওরের শত শত কৃষক।
জানা যায়, এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় ৭০৫ হেক্টর জমির ধান। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে ফেলেন কৃষকরা। আর এতে করে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। পচা ও অপুষ্ট ধান বিক্রি হচ্ছে ৫-৬শ’ টাকা মণে। এতে মিলছে না উৎপাদন খরচের অর্ধেকও। ব্যাংক ও মহাজনি ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দিশেহারা প্রান্তিক কৃষকরা।
প্রান্তিক চাষি আলী রহমান জানান, অপুষ্ট ধান কেটে ফেলায় শুকানোর পর এগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না। ৬০০ টাকা মণ বিক্রি করতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচই উঠছে না। এমন অবস্থায় ঋণের টাকা পরিশোধ হবে কীভাবে, সারা বছর খাবোই বা কী? আমাদের পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ নেই।
ইটনার মীরবাড়ি হাটির আব্দুল কাদির জানান, এনজিও থেকে টাকা নিয়ে তারা সামান্য জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ধান তলিয়ে যাওয়ায় তাদের এখন পথে বসার উপক্রম। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার চলছে। এদিকে এনজিওর লোকজন কিস্তির টাকার জন্য বাড়িতে এসে বসে থাকেন। তাই ঈদতো দূরের কথা, ঋণ পরিশোধ আর পরিবারের খাবারের খরচ চালানো নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।
কৃষকরা আরও জানান, ধার-দেনা ও চড়া সুদে টাকা নিয়ে তারা ফসল আবাদ করেছেন। কিন্তু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং উৎপাদন খরচও ওঠাতে না পারায় তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। প্রতিমণ ধান উৎপাদনে এক হাজার টাকা খরচ হলেও শ্রমিকের খরচ মেটাতে জমির পাশেই অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। এরপরও মিলছে না ক্রেতা।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হচ্ছে।