আল-আমীন দেওয়ান : কর্মক্ষেত্রে হয়রানি এবং যৌন পৗড়নের অভিযোগ উঠেছে অপো বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
আর এই অভিযোগ করেছেন তাদেরই এক সহকর্মী (বর্তমানে সাবেক), যিনি অপো বাংলাদেশের একটি বিভাগের ম্যানেজার ছিলেন।
এছাড়া অপোর আরও একজন উর্ধ্বতন নারী কর্মকর্তা সম্প্রতি চাকরি ছেড়েছেন এই জন্য যে, তার বিভাগে তারই এক সহকর্মীর জন্য অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো।
যৌন পীড়ন ও কর্মস্থলে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন যিনি, তিনি ২০২১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইক্যুপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (অপো) এবং পাঁচ কর্মকর্তাকে আইনি নোটিসও দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার হাফিজুর রহমান খান অভিযোগকারীর পক্ষে ওই নোটিস পাঠান।
ওই নোটিসের অনুলিপি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরেও দেয়া হয়।
১০ পাতার ওই নোটিসে অভিযোগ ও ঘটনা তুলে ধরেছেন। এতে ২৫টি প্যারা ২৫টি নাম্বারে উল্লেখিত রয়েছে।
ওই নোটিসে তাকে যৌন পীড়ন এবং কর্মক্ষেত্রে হয়রানি করার জন্য উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ চান। সেখানে তিনি অপোর কাছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওনার বিষয়েও ছাড়পত্র চান। নোটিস পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা চান।
এছাড়া নোটিসে তিনি বলেন, তার চরিত্র হননের চেষ্টায় অপপ্রচার বা গুজব চালানো হচ্ছে, যে বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।
নির্যাতনের অভিযোগকারী ওই কর্মকর্তা টেকশহর ডটকমকে বলেন, এটা শুধু সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট নয় সঙ্গে অপোর আরও অনেক বিষয় ছিলো। এটা সলভ হয়নি। যেটা হয়েছে আমিই জব ছেড়ে দিয়েছি। অপোর কাছে আমি লাখ লাখ টাকা পাই যেগুলো ওরা ক্লিয়ার করেনি।
তবে উল্লেখিত যৌন হয়রানির ইস্যুসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংবাদ জিজ্ঞাসার জন্য টেকশহরের পক্ষ হতে যোগাযোগ করা হয় অপো বাংলাদেশের সঙ্গে ।
বিস্তারিত জানানো হয় অপো বাংলাদেশের ডিরেক্টর (এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স এন্ড এডমিন) ওয়াং লি এর সঙ্গে, যিনি জেনি নামে বাংলাদেশে পরিচিত।
তিনি জানান, এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না।
শেষে অপো বাংলাদেশের পক্ষে ব্লাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিস এশিয়াটিক ৩৬০ একটি বক্তব্য পাঠায়। বক্তব্যে সংবাদ জিজ্ঞাসার মধ্যে দুটি বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও এ যৌন হয়রানির বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি।
সেখানে সাধারণ বক্তব্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘ একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে দেশেই অপো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেখানকার দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রতিটি অংশীদারদের স্বার্থ রক্ষার্থে অপো সব সময় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে।’
এছাড়া টেকশহর আলাদাভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে অভিযোগের তালিকায় নাম থাকা বাংলাদেশি দুই কর্মকর্তার সঙ্গে।
এরমধ্যে একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা এখনও কর্মরত আছেন আর বাংলাদেশি আরেক কর্মকর্তা সম্প্রতি অপো হতে অব্যাহতি নিয়েছেন।
কর্মরত থাকা বাংলাদেশি কর্মকর্তা টেকশহর ডটকমকে জানান, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। আনুষ্ঠানিকভাবে এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
আর অব্যাহতি নেয়া কর্মকর্তা টেকশহর ডটকমকে জানান, তিনি কোনোভাবেই এসব বিষয়ের মধ্যে ছিলেন না। তার যা দায়িত্ব ছিলো সেখানে অভিযোগকারী কর্মকর্তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটনারও সুযোগ নেই। আইনি নোটিশের পর তার যথাযথ জবাবও তিনি দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার হাফিজুর রহমান খান টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের ক্লায়েন্টের কোনো ইন্সট্রাকশন এখন এ বিষয়ে নেই। আমাদের ক্লায়েন্ট আমরা ইন্সট্রাক্ট করেছিলাম যে পুলিশের সাথে কথা বলেন এবং মামলা ফাইলিংয়েল জন্য। পরবর্তীতে উনি এই বিষয়ে কোনো ইন্সট্রাকশন দেননি।’
‘এটা কোম্পানির দায়িত্ব ছিলো এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া। যখন একটা হ্যারাসমেন্টের এলিগেশন এসছে এটা কোম্পানির নিজস্ব দায়িত্ব ছিলো এ ব্যাপারে তদন্ত করে নিজেরাই ব্যবস্থা নেয়া। এতো বড় কোম্পানি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তারা জিনিসটাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে, বরং তার বিরুদ্ধে আবার অন্য এলিগেশন চাপিয়েছে। যেন তিনি কেনো কথা না বলতে পারেন।’ উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যারিষ্টার হাফিজুর রহমান খান বলেন, অফিসে এবং চাকরি আইনে এ ধরণের ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের যারা নারী কর্মীরা কাজ করেন তাদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি হয়। বাংলাদেশের মাটিতে এসে বিদেশী একটি কোম্পানি এ ধরণের কাজ করে যাবে, এতো বড় কোম্পানি কোনো ব্যবস্থা নেবে না, কেনো স্টেপ নেবে না এটা হতে পারে না।
‘আমরা এখনও ক্লায়েন্ট হতে কোনো ইন্সট্রাকশন পায়নি, পেলে আমরা এগুবো।’ জানান তিনি।