মোঃ নুরনবী ইসলাম, দিনাজপুরঃ উন্নতমানের পপকর্ণের বীজ বিক্রি, চাষাবাদের পর ফসল ক্রয় ও তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করে এলাকায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের গোলাম রব্বানী। তিনি বর্তমানে দিনাজপুর জেলার খানসামা, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, সদর উপজেলা ও নীলফামারী সদর উপজেলায় সিদ্দিক সীডস এর পপকর্ণের চাষাবাদ বিস্তার ঘটিয়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পরিচিত হয়েছেন পপকর্ণ রব্বানী নামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালে কৃষিবিদ বি.আই সিদ্দিক পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার জন্য আমেরিকা থেকে পপকর্ণ বীজ নিয়ে এসে সফলতা অর্জন করে। ২০০২ সালে ঢাকায় সিদ্দিকের সাথে খানসামা উপজেলার গোলাম রব্বানী পরিচিত হয়ে পরীক্ষামূলক চাষাবাদের জন্য ৪৫ কেজি বীজ নিয়ে এসেই এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রথমদিকে চাষাবাদে সফল হলেও বাজারজাত করতে বিপাকে পরে রব্বানী। পরে কৃষিবিদ সিদ্দিকের পরামর্শে ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের রেস্টুরেন্ট ও ফুটপাতে পপকর্ণের খৈ বিক্রি করার জন্য ২০০ মেশিন নিজেই কিনে দিয়ে সরবরাহ করে। এরপর উপজেলায় প্রতি বছরে বৃদ্ধি পায় পপকর্ণ চাষ। এবছর তিনি ২৫ টন বীজ বিক্রি করেছেন। চাষ হয়েছে ২২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
গোয়ালডিহি গ্রামের পপকর্ণ চাষী মোস্তফা কামাল ডাবলু শাহ্, দীনেশ চন্দ্র রায় ও একরামুল হকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ২০০২ সাল থেকে পপকর্ণ চাষ করে। অন্যান্য আবাদে লোকসান হলেও পপকর্ণ চাষ করে তারা প্রতিবছর লাভবান হয়। এজন্য প্রতি বছর তারাও পপকর্ণের চাষ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে তারা অনেকটাই পপকর্ণ চাষের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য উদ্যোক্তা গোলাম রব্বানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী বলেন, পপকর্ণ চাষ করে এখনো কারো লোকসান হয়নি। পপকর্ণ একটি লাভজনক ফসল। প্রথমের দিকে বীজ কিনতে চাষিদের আগ্রহ না থাকলেও এখন বীজ কেনার জন্য চাষীরা আগে থেকেই যোগাযোগ করে। বিঘা প্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১২০০-১৪০০ কেজি পপকর্ণ উৎপাদন হয়ে থাকে। যা প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এবছর বিঘা প্রতি ৬৫-৭০ হাজার টাকার পপকর্ণ বিক্রি করেছেন চাষীরা। বর্তমানে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় কয়েকটি উপজেলায় ২৫-৩০ চাষী এ পপকর্ণ চাষ করে থাকে। এটি চাষ করে চাষীদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। বাড়ছে উঁচু জমি গুলোর দাম। বর্তমানে এই পপকর্ণের ১০-১৫ লাখ মানুষ সুফল ভোগ করতেছে। তবে সরকারের সহায়তা পেলে এর চাষাবাদ বৃদ্ধি কওে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, পপকর্ণ হচ্ছে একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। স্কুলের সামনে, ফুটপাতে, সিনেমা হলে, রেস্টুরেন্টে পপকর্ণের খৈ এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে খৈ ছাড়াও বিস্কুট ও হরলিক্স তৈরিতে পপকর্ণ ব্যবহার করা হয়। খানসামা উপজেলায় ব্যাপক হারে পপকর্ণের চাষাবাদ করে এলাকায় প্রান্তিক কৃষকদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে দিয়েছে রব্বানী। পপকর্ণ চাষীদের কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময় যেকোন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। রব্বানীর এই উদ্যোগকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।