টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: গত সপ্তাহে ১০ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিটকয়েনের মূল্য ৩০ হাজার ডলারের নিচে নেমেছে। আর গত মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো সামগ্রিকভাবে ৮০০ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে বলে জানিয়েছে ডাটা সাইট কয়েনমার্কেটক্যাপ। মার্কিন কেন্দ্রিয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) মুদ্রানীতি কঠোর বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন থাকায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ক্রিপ্টোমার্কেট কত বড়ো?
গত নভেম্বরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের মূল্যমান দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ডলার; যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিটকয়েনের এই মূল্যবৃদ্ধির সুবাদে ক্রিপ্টো মার্কেটের বাজারমূল্য বেড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। তবে গত সপ্তাহে বিটকয়েনের মূল্য কমে যাওয়ার কারনে সামগ্রিক ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারমূল্য এক দশমিক ৫১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বিটকয়েনের বাজারমূল্যমান ছিলো ৬০০ বিলিয়ন ডলার। এরপরেই ছিলো ইথেরিয়াম (২৮৫বিলিয়ন ডলার)।
ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিক কে এবং কে ব্যবসা করে?
খুচরাভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ, কোম্পানি, ব্যাংক, হেজ ফান্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলো থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আগ্রহ ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও ক্রিপ্টো বাজারে খুচরা বনাম প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তথ্য পাওয়া কঠিন কিন্তু এরপরেও বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি কয়েনবেইজ জানিয়েছে চতুর্থ প্রান্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক এবং খুচরা বিনিয়োগকারীরা প্রত্যেকেই এ সম্পদের ৫০ শতাংশ করে ধরে রেখেছে।
২০২১ সালে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকরা ১ দশমিক ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা করেছে; যা ২০২০ সালের তুলনায় ১২০ বিলিয়ন ডলার বেশি। প্রচলিত বেশিরভাগ বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের হাতে গোনা কয়েকজনের হাতে রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের (এনবিইআর) অক্টোরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিটকয়েন বাজারের এক-তৃতীয়াংশই ১০ হাজার প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের হাতে। এছাড়া এক হাজার বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে প্রায় তিন মিলিয়ন বিটকয়েন টোকেন। ২০২১ সালে ১৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিকই ডিজিটাল সম্পদে বিনিয়োগ করেছেন বলে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর গবেষণায় জানা গিয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির পতনে আর্থিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা?
সার্বিক ক্রিপ্টোবাজার অপেক্ষাকৃত ছোট। এ অবস্থায় সম্ভাব্য আর্থিক স্থিতিশীলতার হুমকি এড়াতে প্রথাগত সম্পদগুলোর স্ট্যাবলকয়েনগুলোর মান নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবিভাগ এবং আন্তর্জাতিক ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বোর্ড।
স্ট্যাবলকয়েনগুলো মূলত অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই স্ট্যাবলকয়েন যেসব সম্পদের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকে সেগুলো বাজারের যেকোন চাপে পড়ে মূল্যমান হারাতে পারে অথবা তারল্যে পরিণত হতে পারে। এছাড়াও এই সম্পদ এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অস্পষ্ট।
আর এ কারনে স্ট্যাবলকয়েনগুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সংশয়ে ভোগেন ; যা তাদের মধ্যে আস্থাহীননা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বাজারে কোনরকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের হার বহুপরিমান বেড়ে যায়। সম্প্রতি শীর্ষস্থানীয় স্ট্যাবলকয়েন টেরাইউএসডি ডলারের বিপরীতে বেধে দেয়া মান ১:১ ভেঙ্গে পড়ে এবং মুদ্রাটির মান দশমিক ৬৭ ডলারে নেমে আসে। এরপ্রভাবে বিটকয়েনের মানও কমে যায়।
রেগুলেটররা বলছেন, ক্রিপ্টোসম্পদের পারফর্মেন্সের সাথে আরো কিছু কোম্পানির ভাগ্য জড়িত। সেইসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাসেট ক্লাস সম্পদ নিয়ে আরো বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জড়ানোয় অন্যান্য ঝুঁকিও বাড়ছে। তবে ক্রিপ্টোর পতন আর্থিক ব্যবস্থা ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে কতোটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে রেগুলটরদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স/আরএপি