বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই যুক্ত হওয়ার আগেই উদ্যোগে এবং উদ্যোক্তা হিসেবে তখন থেকেই যাত্রার শুরু। কাজ করছেন তথ্যপ্রযুক্তির বেশ কিছু খাত নিয়ে। নিজের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে বিনিয়োগ। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিনিয়োগ করেছিলেন ডব্লিউপি ডেভলপারসের প্রতিষ্ঠাতা এম. আসিফ রহমান। নিজের উদ্যোগ এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উদ্যোগের নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন টেকশহর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘টেক ভেঞ্চারস টক’-এ।
টেকশহর: বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর আগেই আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুটা। সে বিষয়ে বলুন।
এম. আসিফ রহমান: আমি প্রোগ্রামার ছিলাম। ৮ম শ্রেণীতে থাকতেই আমি প্রোগ্রামিং শিখি এবং শুরু করি। পরবর্তীতে কলেজে ভর্তি হয়ে মূলত প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হই। তখন ওয়েব প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথম ওপেন সোর্সে আমার কন্ট্রিবিউশন শুরু হয় ২০০৩ সালে। ২০০৪ সাল থেকে আমি সক্রিয় ভাবেই ওয়ার্ডপ্রেসে এ কন্ট্রিবিউশন শুরু করি। সে বছরেরই জানুয়ারি মাসে শুরু হয় আমার প্রথম প্রতিষ্ঠান এআর কম যেখান থেকে আমরা বিভিন্ন ওয়েব সলিউশন দিতাম। এর পরে সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এ জন্যই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয়। এ জন্য অবশ্য আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে আমি লেগে ছিলাম।
টেকশহর: আপনার ডব্লিউপি ডেভলপারস প্রতিষ্ঠানের শুরুটা কিভাবে?
এম. আসিফ রহমান: ২০১১-১২ সালে ডব্লিউপি ডেভলপারসের শুরুটা। আমি যেহেতু শুরু থেকেই ওয়ার্ডপ্রেসের বিভিন্ন কোর কার্যক্রমে নানা ভাবে যুক্ত ছিলাম। ২০০৯ সালের আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষেই আমি ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে কাজ শুরু করি। ওয়ার্ডপ্রেসের একটি নিয়মিত আয়োজন হয় ‘ওয়ার্ডক্যাম্প’ নামে। ২০১৯ সালের করোনাকালীন সময়ের আগ পর্যন্ত আমি প্রায় ১০০ ওয়ার্ডক্যাম্পে অংশ নিয়েছি। আমরা বাংলাদেশেও একবার এ ‘ওয়ার্ডক্যাম্প’ আয়োজন করেছি। ২০১১ সালের সান-ফ্রান্সিসকো অনুষ্ঠিত ওয়ার্ডক্যাম্পে অংশ নেই আমার একটি আইডিয়া নিয়ে। সে বিষয়ে তখন আমি ওয়ার্ডপ্রেসের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে আলাপ করি। সে আলাপ শেষে আমি দেশে এসে সে আইডিয়াটা নিয়ে কাজ শুরু করি। তারপর থেকেই আমার নানা ধরনের প্লাগিনস তৈরি শুরু করি এবং ধীরে ধীরে বিক্রি শুরু করি। ২০১৭ সাল থেকে আমরা সিরিয়াস ভাবেই এ কাজগুলো করি।
টেকশহর: ওয়ার্ডপ্রেসের শুরু থেকেই আপনি জড়িত ছিলেন। সে সময় আর এখনকার পরিবর্তন কেমন দেখছেন?
এম. আসিফ রহমান: ২০০৪-২০০৫ সালে ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যবহারকারী তেমন ছিল না। তবে ২০০৬ সালের পর বাংলাদেশের অনেক ভালো ডেভলপাররা কাজ করতেন। তবে সে সময়ে প্রোগ্রামার কমিউনিটি থেকে ওয়ার্ডপ্রেসকে তেমন একটা ভালো ভাবে দেখতো না। তখন বলা হতো, এটা খুবই ছোট একটা সিএমএস যা এতটা গুরুত্ব পাওয়ার মতো না। তবে এখন ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয়তা যে পর্যায়ে বেড়েছে যে এখন আর সে কথাগুলো হয় না। এখন নানা ধরনের থিম, প্লাগিন নিয়েও বাংলাদেশের অনেকেই কাজ করছেন।
টেকশহর: এখন আর শুধু ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে তাই নয়, বরং ওয়ার্ডপ্রেসের নানা জিনিসও তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
এম. আসিফ রহমান: এটা বাংলাদেশে দারুণ ভাবে হয়েছে। যারা আগে থেকেই ডেভলপার হিসেবে কাজ করছে তারা কিন্তু ধীরে ধীরে বেশ কিছু সলিউশন নিয়ে কাজ করছে। এখন বাংলাদেশে প্লাগিসন, থিম তৈরি করছেন এমন প্রতিষ্ঠান যে শুধু বাংলাদেশেই ভালো করছে তা কিন্তু নয়, দেখা যাচ্ছে দেশের বাইরেও এসব প্রতিষ্ঠান শীর্ষে থেকেই কাজ করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ চাহিদা বাড়ছে এবং অনেকেই এতে যুক্ত হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বড় একটি জায়গায় ওয়ার্ডপ্রেসের প্রচুর কাজ হচ্ছে। এখানে সবাইকে ভালো প্রোগ্রামার হতে হবে বিষয়টি তা নয়। সে হিসেবে এখন লক্ষাধিক মানুষ আছে যারা ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে কাজ করছে।
টেকশহর: স্টার্টআপ বিষয়ে বেসিসের কেমন ভূমিকা আছে বলে আপনি মনে করেন?
এম. আসিফ রহমান: আমি নিজেই অনেকদিন ধরেই বেসিসের স্ট্যার্টআপ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিতে কাজ করছি। স্টার্টআপ বললেই আমরা হয়তো সবসময় ভাবি স্ট্যার্টআপ মানেই হয়তো তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোগ। বিষয়টা তা নয়। তবে আমার যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী তাই আমি তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক স্ট্যার্টআপ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, এ ধরনের স্টার্টআপকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাবে, কিভাবে জনবল নিয়োগ দিতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো তাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব জায়গায় বেসিস বেশ জোরালো এবং সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও দেখা যায় অনেক নতুন নতুন স্টার্টআপ নিজেরাই বেশ ভালো করছে। তারাও কিন্তু নতুনদের এবং নিজেদের মধ্যে সহায়তা করতে পারে। এ জায়গাগুলোতেও বেসিস ম্যাচমেকিংয়ের কাজটি করতে পারে। এছাড়াও বেসিস যেহেতু সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের শীর্ষ সংগঠন তাই বেসিস চাইলেই কিন্তু আমাদের দেশের বাইরেও নানা ভাবে কাজের জন্য সহায়তা করতে পারে। আমি দীর্ঘ সময় ধরেই স্টার্টআপ কমিটিতে থেকেও মনে হচ্ছে এখনো বেসিস সব ধরনের কাজগুলো করতে পারেনি। তবে হয়তো খুব শিগগিরই এ ধরনের কার্যক্রমে বেসিস আরো সক্রিয় ভাবেই কাজ করবে। যার সুফলও পাওয়া যাবে।
টেকশহর: উদ্যোগের পাশাপাশি আপনি বিনিয়োগের সঙ্গেও যুক্ত। সে বিষয়টি বলুন।
এম. আসিফ রহমান: আসলে বিনিয়োগ করবো বলে বা চিন্তা করেই সেভাবে বিনিয়োগে যুক্ত হইনি আমি। আমি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করার পর সক্রিয় ভাবে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক আয়োজনগুলোতে নিয়মিত অংশ নেই তখনই অনেকের সঙ্গে আমার পরিচিত বাড়তে থাকে। সে সময়ে বিভিন্ন ছোট ছোট পরিচিতরা অনেকেই মিলে কোন একটি উদ্যোগে বিনিয়োগ করতো। এমনই একটি সুযোগ আমি পাই এবং সেখান থেকেই আমি বিনিয়োগে যুক্ত হই।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন টেকশহর ডট কমের স্পেশাল করসপনডেন্ট নুরুন্নবী চৌধুরী]