শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন

পানি কমে যাওয়াতে চিংড়ি মাছ উঠে এলো ডাঙ্গায়, মুহূর্তে তুমুল ভাইরাল

  • Update Time : বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২
চিংড়ি মাছ

জুমবাংলা ডেস্ক : পানি কমে যাওয়াতে চিংড়ি মাছ উঠে এলো ডাঙ্গায়, মুহূর্তে তুমুল ভাইরাল। ভিডিওটি দেখুন নিউজের নিচে। এখন জেনে নিন চিংড়ি মাছের অজানা কিছু তথ্য, চিংড়ি একটি সন্ধিপদী (আর্থ্রোপোডা) প্রাণী। স্বাদু জলের চিংড়ির গণ প্যালিমন এর বিভিন্ন প্রজাতিকে একত্রে চিংড়ী বলে। চিংড়ির প্রতি দেহখণ্ডকে একজোড়া করে মোট উনিশ জোড়া উপাঙ্গ থাকে। অবস্থানের উপর ভিত্তিকরে এদেরকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা-শির-উপাঙ্গ, বক্ষ-উপাঙ্গ ও উদর-উপাঙ্গ। চিংড়ির শির-উপাঙ্গ পাঁচ জোড়া, বক্ষ-উপাঙ্গ আট জোড়া এবং উদর-উপাঙ্গ ছয় জোড়া। শির-উপাঙ্গ ও বক্ষ-উপাঙ্গগুলো সেফালোথোরাক্সে এবং উদর-উপাঙ্গ উদরে অবস্থান করে। চিংড়ির একটি আদর্শ উপাঙ্গ তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত হয়। যথা-দেহের সাথে যুক্ত প্রোটোপোডাইট ভিতরের দিকের অংশ এন্ডোপোডাইট এবং বাইরের দিকের অংশ এক্সোপোডাইট প্রোটোপোডাইট আবার দুটি অংশ নিয়ে গঠিত হয় যাদের একটি কক্সোপোডাইট বা সংক্ষেপে কক্সা এবং এর সাথে যুক্ত আরেকটি অংশ হচ্ছে বেসিপোডাইট বা বেসিস ।

অনেক সময় প্রোটোপোডাইট হতে একটি পাতলা অংশ তৈরি হয় যাকে এপিপোডাইট বলে। বাংলাদেশে সাধারণত তিন ভাবে চিংড়ি চাষ করা যায়। যথা : ১ . এককভাবে চিংড়ি চাষ; ২ . পর্যায়ক্রমে চিংড়ি ও ধান চাষ; ৩ .পর্যায়ক্রমে লবণ উৎপাদন ও চিংড়ি চাষ। এককভাবে চিংড়ি চাষ বলতে প্রধানত উপকূলীয় এলাকায় বাগদা চিংড়ির চাষকেই বোঝায়। যেখানে জোয়ার ভাটার প্রভাব রয়েছে সে এলাকা একক চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।খুলনা জেলার চিংড়ি খামার গুলোর অধিকাংশই

উপকূলীয় বাঁধের ভিতরে অবস্থিত। এগুলি এককভাবে চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি আদর্শ খামারে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব দিকে দৃষ্টি রাখা হয় তা হলো , খামারকে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বেষ্টনী বাঁধের ব্যবস্থা রাখা।

বেষ্টনী বাঁধ সাধারণত ২-৩ মিটার উঁচু হয় , যেন সর্বোচ্চ জোয়ারের সময়ও বাঁধের ওপর দিয়ে পুকুরে পানি ঢুকতে না পারে। এছাড়া খামারে পানি ও চিংড়ির পোনা ঢুকানোর জন্য হেড ক্যানেল -এর ব্যবস্থা থাকে। প্রকল্প থেকে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশনের জন্য ফিডার ক্যানেল থাকে। অনেক সময় অভ্যন্তরীণ বাঁধ নির্মাণ করে খামারে পোনা প্রতিপালনের জন্য ছোট ছোট নার্সারি পুকুর তৈরি করা হয়।

খামারের প্রতিটি পুকুরে সঠিক মাত্রায় পানির গভীরতা বহাল রাখতে স্লুইস গেট -এর ব্যবস্থা থাকে। স্লুইস গেট চিংড়ি খামারের অন্যতম প্রধান অবকাঠামো। বড় আকৃতির প্রধান স্লুইস গেট ফিডার ক্যানেলের মুখে বসাতে হয়। অল্প ব্যয় এবং

রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার জন্য সাধারণত কাঠের গেট ব্যাবহার করা হয়।বড় আকারের খামার ২০-২২ একর পর্যন্ত হয়। খামারের নার্সারি পুকুরের আয়তন সাধারণত পালন পুকুরের দশভাগের এক ভাগ হয়ে থাকে। পালন পুকুরের গভীরতা ১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত এবং নার্সারি পুকুরের গভীরতা অনধিক ০.৭৫ মিটার।

প্রতিবার চিংড়ি চাষ শুরু করার আগে পুকুর থেকে পানি সম্পূর্ণ বের করে নিতে হয়। পুকুরে খাদ্যঘাটতি রোধের জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫০ কেজি জৈব সার এবং ৫৯ কেজি অজৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পরে পানির গভীরতা ৪০-৫০ সেন্টিমিটার রেখে এক সপ্তাহ পর পোনা ছাড়তে হয়।খামারে সাধারণত দুই ভাবে পোনা মজুদ করা হয়। সারা বছরই উপকূলীয় নদী ও খালে চিংড়ির লার্ভা পাওয়া যায়। সাধারণত পানির উপরের স্তরে লার্ভা বাস করে।

সে কারণে পানি প্রবেশ পথের স্লুইজ গেট এমনভাবে খুলে দেওয়া হয় যেন জোয়ারের সময় কেবল উপর স্তরের পানি ঘেরে প্রবেশ করে। এ পানির সঙ্গে চিংড়ির লার্ভা খামারে ঢুকে।ইদানিং প্রাকৃতিক উৎস থেকেও লার্ভা সংগ্রহ করে প্রথমে নার্সারী পুকুরের ও পরে পালন পুকুরে মজুদ করা হয়। নার্সারী পুকুরের জন্য একর প্রতি ২,৫০,০০০-৩,০০,০০০ পোনা এবং পালন পুকুরে একর প্রতি ১৫,০০০-৩০,০০০ পোনা ছাড়া হয়।

খুলনা, সাতক্ষীরা , বাগেরহাট , চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে সমুদ্র উপকূল থেকে প্রচুর পরিমাণ লার্ভা সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। হ্যাচারিতে উৎপাদিত লার্ভার পরিমাণ চাহিদার চেয়ে কম বলে অধিকাংশ খামার প্রাকৃতিক উৎসের উপর ই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।বাগদা চিংড়ি সাধারণত ৪ মাসের মধ্যে গড়ে ৫০-৬০ গ্রাম ওজনের এবং তখন তা বাজারজাত করা হয়। উন্নততর পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা করলে হেক্টর প্রতি ৫০০-৬০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন পর্যায়ক্রমে চিংড়ি ও ধান চাষ এ পদ্ধতিতে ঘেরের ভিতরে পুকুরে পালাক্রমে চিংড়ি ও ধান চাষ করা হয়।

শীতকালে ঘেরের ভিতর জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ এবং বর্ষার আগে চিংড়ি আহরণ করে একই ঘেরে ধান ও অন্য মাছ চাষ করা হয়। জোয়ারের পানির সঙ্গে চিংড়ির লার্ভা ও অন্যান্য লোনা পানির মাছের পোনা প্রবেশ করে। বর্ষার শুরুতে জুন-জুলাই মাসে চিংড়ি ধরে নেওয়া হয়।পর্যায়ক্রমে লবণ উৎপাদন ও চিংড়ি চাষ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় পর্যায়ক্রমে একই জমিতে লবণ উৎপাদন ও চিংড়ি চাষের প্রথা চালু আছে। সেখানে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত লবণ তৈরি করা হয়। মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চিংড়ি চাষ করা হয়।

স্বাদুপানির চিংড়ি চাষ স্বাদু পানিতে এখনো ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। দেশে স্বাদু পানিতে চাষ উপযোগী চিংড়ি হচ্ছে গলদা চিংড়ি। তবে-ও চাষ করা সহজ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয় এর সর্বত্রই এ চিংড়ির বিচরণ। গলদা স্বাদু পানিতে বাস করলেও প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার জন্য ঈষৎ লবণাক্ত পানিতে চলে আসে। তাই মোহনা ও খাড়ি অঞ্চলের নদীতে যেখানে জোয়ার ভাটা হয় সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের প্রচুর লার্ভা পাওয়া যায়।

কৃত্তিম উপায়ে এখন কক্সবাজার , চট্টগ্রামের পটিয়া , নোয়াখালীর ব্যাকইয়ার্ড হ্যাচারি এবং আরো কয়েকটি হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে।আলো-বাতাস সমৃদ্ধ গাছপালা মুক্ত খোলা জায়গায় গলদা চাষের জন্য এক থেকে তিন বিঘা আয়তনের ৪-৫ ফুট গভীর আয়তাকার পুকুর সবচেয়ে ভালো। মাটি ও পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে উপযুক্ত পুকুরে হেক্টর প্রতি ২০,০০০-৫০,০০০ পোনা মজুদ করতে হয়।

পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ভাসমান ছোট ছোট উদ্ভিদ ও জুপ্লাংকটন , কাকড়া , ঝিনুক ও শামুকের বাচ্চা , ছোট মাছ , মাছের ডিম , মৃত জলজপ্রাণী পচা অংশ ইত্যাদি গলদা চিংড়ির খাদ্য। দ্রুত ও সন্তোষজনক বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক খাবার দিতে হয়। পুকুরে খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার পরিমাণমতো দুই সপ্তাহ পর পর প্রয়োগ করলে চিংড়ি দ্রুত বড় হয়।মৎস্য অধিদপ্তর এর এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে মোট চিংড়ির উৎপাদন ছিল ১,৯৫,৬৯০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে সংগৃহীত হয়েছিল ১,৫১,৪২৯ মেট্রিক টন এবং সমুদ্র থেকে ৪৪,২৬১ মেট্রিক টন।



Source by [সুন্দরবন]]

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Recent Posts

© 2023 sundarbon24.com|| All rights reserved.
Designer:Shimul Hossain
themesba-lates1749691102