স্বাদে লটকন বেশ মজার। টক ও মিষ্টি। আমাদের দেশে প্রচুর লটকন চাষ হচ্ছে। নানা খাদ্য ও পুষ্টিগুণ এই ফলকে দিয়েছে বিশেষত্ব। লটকনে থাকা নানা উপাদান রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি ও রুচি বাড়াতে সহায়তা করে।
গতবারের তুলনায় এবছর কুড়িগ্রামে লটকনের অধিক চাষ হয়েছে। তবে এবার ফলন কম হওয়ায় চাষিরা চিন্তিত থাকলেও দাম আগের থেকে দ্বিগুন পাওয়ায় তারা খুশি।
লটকনে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এ ফল চাষ করতে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। লটকন চাষের প্রধান বাধা হলো পিঁপড়া ও আঁচা। সময় মতো অতিরিক্ত ডালপালা ছাঁটাই ও প্রে করলে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আলো বাতাস পাওয়া যায় এমন জায়গায় গাছ লাগালে আর ভালো করে যত্ন নিলেই লটকনের ভালো ফলন হয়। এবছর কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ৮-৯ শতাধিক কৃষক লটকন চাষ করেছেন। আর ৫৫ জন ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের জেলার লটকনের চাহিদা পুরো দেশ জুড়ে রয়েছে। এখানকার লটকন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। স্বাদ, আকার ও গুনগত মান ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখানকার লটকন নিয়ে যায়। গত বছর ১ মণ লটকনের দাম ছিলো ১২০০-১৪০০ টাকা। এবছর ১ মণ লটকন বিক্রি ২৬০০-৩২০০ টাকায় হচ্ছে। এবার ফলন কম হলেও দামের দিক দিয়ে চাষিরা লাভবান হয়েছে।
একই গ্রামের চাষি জয়নাল আবেদিন বলেন, অন্যান্য ফল বিদেশে রপ্তানি হয়। আমাদের দেশে লটকনের ব্যাপক ফলন হয়। বিদেশেও লটকনের ভালো চাহিদা রয়েছে। সরকার ও কৃষি বিভাগের চেষ্টার পাশাপাশি কৃষকদের সাহায্য করলে লটকন বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব। কিন্তু হয় তার উল্টো। কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের কেউ পরামর্শ দেয় না। তাই ফলনে বিপর্যয়ের সময় কোনো সহযোগীতা পাওয়া যায় না।
কাঁঠালবাড়ী বাজারের পাইকার রফিকুল ইসলাম বলেন, সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের খরচ দ্বিগুন হয়ে গেছে। আগে আমরা নিজেরাই বিভিন্ন জেলায় লটকন বিক্রি করতাম। এখন তা আর করতে পারি না। শ্রমিকের মজুরি থেকে শুরু করে পরিবহন খরচ সব কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার অন্য সব খাতে অনুদান দিলেও এইখাতে কিছুই দেয় না।
সিরাজগঞ্জ থেকে লটকন কিনতে আসা আব্দুর রহিম বলেন, এখানকার লটকনের স্বাদ ও মান খুবই ভালো আর দামও কিছুটা কম। নরসিংদীর লটকনের তুলনায় এখানে আরো ৫০০ টাকা কমে লটকন পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শামসুজ্জামান জানান, অল্প খরচে লটকনের ভালো ফলন হয়। তবে চাষিরা গাছের ভালো করে যত্ন নিলে ফলন ও উপার্জন দুটোই বৃদ্ধি পাবে।