টেক শহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতে মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে টাওয়ারসহ অবকাঠামো শেয়ারিংয়ে জোর দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেছেন, টেলিযোগাযোগ খাতে অবকাঠামো শেয়ারিং উৎসাহিত করতে ‘অ্যাক্টিভ শেয়ারিং’ নীতিমালা দ্রুত করা হবে। নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে সোবাদাতারা একে অপরের মধ্যে অবকাঠামো শেয়ারিং করতে পারবে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ-টিআরএনবি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটরদের যে টাওয়ার আছে তা টাওয়ার কোম্পানিকে ছেড়ে দেন। এতে বড় ধরনের ইনভেস্টমেন্ট কমে যাবে। সেই অর্থ সেবার গুণগতমান উন্নত করতে ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি বলেন, একটিভ শেয়ারিং জরুরি বিষয়। এটাকে প্যাসিভ শেয়ারিংয়ের ভেতরে রাখলে যে সুবিধা তা পাওয়া যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি এই নীতিমালা দ্রুত করবো। যতদিন নীতিমালা চূড়ান্ত না হবে ততদিন সেবাদাতাদের বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে অবাকাঠামোর `অ্যাকটিভ শেয়ারিং’ করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিদ্যমান নীতিমালার ভেতরেই মোবাইল অপারেটরদের অবাকাঠামো ভাগাভাগির সুযোগ রয়েছে। অবকাঠামো ভাগভাাগির আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে বিটিআরসি কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, গুণগত সেবা বৃদ্ধির জন্য অপারেটরদের থেকে প্রস্তাব এলে রেগুলেটর থেকে তা ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হবে। তিনি অপারেটরদের সেবার গুণগত মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন, ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী, ইডটকোর কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিকি স্টেইন, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান এবং রবির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অনামিকা ভক্ত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিযোগাযোগ খাত বিশ্লেষক টিআইএম নূরুল কবীর। বিশেষজ্ঞ হিসেবে আলোচনা করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন।
মূল প্রবন্ধে টিআইএম নূরুল কবীর বর্তমানে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশেও অবকাঠমো শেয়ারিং বাধ্যতামূলক করা হলে একইভাবে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব এবং একই সঙ্গে সেবার গুণগত মান আরও বাড়বে। তিনি এ সরকারের নীতি নির্ধারক মহলকে ‘অ্যক্টিভ শেয়ারিং’ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
টেলিকম বিশেষজ্ঞ মনজুর হোসেন বলেন, উইন উইন সিচ্যুয়েশনে একই টাওয়ার শেয়ার করে অনেকে ব্যবহার করলে সেখানে বিনিয়োগের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে। এতে সেবার মান বাড়বে।
মো. রফিকুল মতিন বলেন, পৃথকভাবে বিনিয়োগ না করে অবাকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে মাধ্যমে কীভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে সেবা দেওয়া যায়, তা নীতি নির্ধারকদের দেখতে হবে। অবকাঠামো ভাগাভাগির জন্য বিটিসিএলে এলে `হ্যাঁ’ সূচক বক্তব্য পাবেন।
মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, অবকাঠামো ও সম্পদ বিশেষ করে টাওয়ার ও বেতার তরঙ্গ ভাগাভাগি হলে ছোট অপারেটররা বেশি উপকৃত হবে। ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ বাড়াতে হলে টাওয়ার শেয়ারিং করতে হবে। এজন্য একটিভ শেয়ারিং নীতিমালা প্রয়োজন।
মইনুল হক সিদ্দিকী বলেন, অপারেটরদের সেবা দিতে এক লাখ টাওয়ার লাগবে। এজন্য কে কোথায় টাওয়ার করবে তা সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত।
নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের দৃষ্টান্ত দিয়ে ইমদাদুল হক বলেন, ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে তারা ধানমণ্ডি এলাকায় ৫০টি পপ এর স্থলে তিনটিতে নামিয়ে এনেছেন। এতে ভোগান্তি এবং তাদের জট কমেছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের জন্য একটিভ শেয়ারিং দরকার।
রিকি স্টেইন বলেন, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ টাওয়ার স্থাপন করতে গিয়ে দু’টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রথমত, একই জায়গায় আগে থেকে বড় মোবাইল ফোন অফারেটরের সাইট থাকার কারণে সেখানে অন্য ছোট অপারেটরের জন্য টাওয়ার নির্মাণ ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক হচ্ছে না। আর একটি হচ্ছে, বিকিরণ নিয়ে অহেতুক ভয়ের কারণে মানুষ টাওয়ার নির্মাণের জন্য জায়গা দিতে চাচ্ছে না। এ কারণে মানুষকে শিক্ষিত করতে হবে।
হোসেন সাদাত বলেন, গত চার বছরে টাওয়ার শেয়ারের জন্য কোনো অপারেটরের পক্ষ থেকে অ্যাগ্রিমেন্টের প্রস্তাব করা হয়নি। অ্যাগ্রিমেন্ট না করতে পারলে কোনো অপারেটরকে শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দোষারোপ করা ঠিক নয়।
তাইমুর রহমান বলেন, সব অপারেটরের জন্য টাওয়ার শেয়ারিং অতি শিগগিরই বাধ্যতামূলক করা উচিত । দেশের বর্তমান জ্বালানি সংকটে আমাদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা যদি যৌথভাবে অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারি তাহলে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য শক্তির সঠিক ব্যবহার হবে।
অনামিকা ভক্ত বলেন, গত চার বছরে অপারেটরদের টাওয়ার শেয়ার করা যায়নি। তারা দুই অপারেটরকে প্রস্তাব দিলেও একটি অপারেটর থেকে ফিডব্যাক পেয়েছেন। অপারেটরদের কোন কোন টাওয়ার শেয়ার করা যায়, তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলে তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।