স্টাফ রিপোর্টার।।
খুলনা নগরীর চরের হাটে অবস্থিত বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক কার্যালয় যেন গবাদি পশুর খামারে পরিণত হয়েছে। জেনারেল ম্যানেজার এবং অ্যাডমিন অফিসার দম্পতি ওই কার্যালয় প্রাঙ্গণকে অনেক পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে এখানে অন্তত ১৫টি গরু-ছাগল পালন করছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নিরাপত্তা প্রহরীদের কমান্ডার। তিনিও ৪-৫টি গরু লালন-পালন করছেন অফিস চত্বরেই। সেখানকার জলাশয়ে মাছ চাষও করা হচ্ছে।
এদিকে, সম্প্রতি জেনারেল ম্যানেজার গোলাম রব্বানীর একটি গাভীকে কুকুরে কামড়ায়। তবু, সেই গাভীর দুধ বিক্রি অব্যাহত রাখেন তিনি। কয়েকদিন আগে গাভীটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তা স্থানীয় কসাইয়ের কাছে বিক্রি করা হয়। এর মাংস বিক্রি করা হয় স্থানীয়দের কাছে। জলাতঙ্ক রোগগ্রস্ত গাভীর দুধ ও মাংস বিক্রির খবরে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ গাভীর দেখাশোনা করতে গিয়ে সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বি মন্ডলকেও হাসপাতালে যেতে হয় জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রের দেওয়ার তথ্য এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোলাম রব্বানী এর আগে খালিশপুরের প্লাটিনাম জুট মিলে জিএম হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী তানজিলা বেগম একই প্রতিষ্ঠানে অ্যাডমিন অফিসার ছিলেন। ওই মিল বন্ধের পর গোলাম রব্বানী বিজেএমসির জোনাল অফিসের জিএম এবং তার স্ত্রী অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তারা এ কার্যালয় প্রাঙ্গণকে গবাদি পশুর খামারে পরিণত করেন। এসব গবাদি পশুর দেখভাল করেন সেখানকার নিরাপত্তা প্রহরী ও মালিরা। অফিস চত্বরের গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে গোয়াল ঘর। এসব পশুর খাবারের যোগানও দেওয়া হয় কার্যালয় প্রাঙ্গণের কাঠালগাছসহ বিভিন্ন গাছের পাতা থেকে। এসব পশু দেখভালের সুযোগ নিয়ে পরিবার নিয়ে অফিস চত্বরে বসবাসরত সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বিও গড়ে তুলেছেন গরুর গোয়াল।
সূত্র জানিয়েছে, জিএম গোলাম রব্বানীর দুধ দেওয়া একটি গাভীকে প্রায় তিন মাস আগে কুকুরে কামড়ায়। ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকে গাভীটি। কিন্তু, তার দুধ দোহন এবং বিক্রি করা বন্ধ করেননি রব্বানী। এ গরুর দুধ একই অফিসে কর্মরত অনেকেই কিনেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গাভীটির দেখভাল করতে গিয়ে অসুস্থ পড়ে পড়েন আনসার কমান্ডার রাব্বি। তাকে নিতে হয় জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন। গত ১ আগস্ট গাভীটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতের আঁধারে গাড়িতে তুলে খালিশপুর হাউজিংয়ের আরমান কসাইয়ের কাছে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আরমান কসাই ওই গাভীর মাংস বিক্রি করেন স্থানীয়দের কাছে।
গরু অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বি মন্ডল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যার ও ম্যাডামের কয়েকটি গরু-ছাগল আছে। এর মধ্যে একটি গরুকে কুকুরে না কীসে কামড় দিয়েছে, তা তারা জানেন না। তবে গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পশু চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। কিন্তু, চিকিৎসকও নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে, চিকিৎসক গরুটিকে অন্য গরু থেকে সরিয়ে রাখতে বলেন। সে মোতাবেক কয়েকদিন আগে স্যারের একটি গাড়ি নিয়ে লোক এসে গরুটিকে নিয়ে যায়। তবে কোথায় নিয়েছে, তা আমি জানি না।’
জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে রাব্বি মন্ডল জানান, তিনি এবং খলিল নামের একজন গরু দেখাশোনা করেন। জলাতঙ্ক আতঙ্কে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে যান। কিন্তু, চিকিৎসক জানিয়েছেন, সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না। তিনি ফিরে আসেন।
গরু-ছাগল পালনের বিষয়টি স্বীকার করে গোলাম রব্বানী বলেন, ‘অফিস চত্বরে ৪-৫টি গরু এবং কয়েকটি ছাগল আমার নিয়োগ করা লোক দিয়ে লালন-পালন করা হয়। কোনো গরুকে কুকুরে কামড়ায়নি। তবে, একটি গরু সম্ভবত বিষাক্ত কোনো খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে গরুটি আমার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়েছে, বিক্রি করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমার প্রতিপক্ষরা অনেক ধরনের কথা বলছে, যা সত্য নয়।’
Post Views:
23