ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ছবি : সৌজন্যে
টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর : তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের জন্য আরও ১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। দেয়া হচ্ছে আরও ৭ মিলিয়ন ডলার , বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ।
৩য় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক পর্যালোচনায় মন্ত্রী সোমবার এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির হাইওয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির এই মহাসড়কে বাংলাদেশ বর্তমানে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৪ এবং সাউথইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৫ নামক দু’টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ৭ এপ্রিল ২২ অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় তৃতীয়তো বটেই চতুর্থ সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা দ্বিগুণ করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়ে থাকলাম। বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইটেনেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীদের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক এই কার্যক্রম শুরু হলো।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই সপ্তাহে ১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগে আরও ১৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়। ৭ মিলিয়ন ডলারের টাকা সোনালী ব্যাঙ্কে পাঠানোর জন্য জমা দেয়া আছে। ১৩২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউদথের জন্য সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী সিমিইউ -৬ কনসসোর্টিয়ামকে মোট ৯৪৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হলেও ব্যয় কিন্তু অর্ধেকেরও কম বাড়বে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, দেশে ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের পরিচালনা শুরু হয়। ২০০৮ সালে ব্যান্ডউদথ ক্যাপাসিটি ছিলো ৪৪.৪৬ জিবিপিএস। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডউদথ ক্যাপাসিটি ১৮০০ জিবিপিএস এ উন্নীত হয় এবং ২০২২ সালে অর্থাৎ গত চার বছরে তা ৩৩৭০ জিবিপিএস-এ উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ব্যান্ডউদথ ব্যবহৃত হয় ১০ জিবিপিএস এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬১৮ জিবিপিএস- এ উন্নীত হয় এবং গত চার বছরে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউদথ ব্যবহার ২৪২০ জিবিপিএস- এ উন্নীত হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির আয় ২০০৮- ৯ অর্থবছরে ৪৩.৫৯ কোটি থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৪ দশমিক ৮৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৭ লাখ। ২০২০ সালে কোভিড শুরুর প্রাক্কালে দেশে ১ হাজার জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে তা বেড়ে ৩ হাজার ৪৪০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সি-মি-উই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে। ২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৫ সালে সিমিইউ-৬ সংযোগ চালু হওয়ার পর দেশে ২০৪০০জিবিপিএস-এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইদথ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
কেবল দেশের চাহিদা নয় এই কোম্পানী এখন বিদেশেও ব্যান্ডউইদথ রপ্তানী করছে। ইতোমধ্যে ভারতের আগরতলায় ২০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ রফতানি করা হচ্ছে। ভারতের আসাম রাজ্যের রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান তামাবিল সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউদথ সরবরাহের জন্য সক্রীয়ভাবে কাজ করছে। এছাড়া ভুটান বাংলাদেশ থেকে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউদথ আমদানি করার জন্য লেটার অব ইনটেন্ট প্রদান করেছে।
তিনি জানান, বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়ার জন্য মালেয়েশিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সৌদি আরবে আমরা ৬০০ জিবিপিএস এবং ফ্রান্সে ১৩ জিবিপিএস ব্যান্ডউদথ রপ্তানি করছি। এছাড়াও সৌদি টেলিকমও আরও ব্যান্ডউইদথ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।