টেকশহর কনটেন্ট কাউন্সিলর: ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র খুব প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য তা আরো গুরুত্বপূর্ণ।
কাজে যোগদান থেকে শুরু করে জমি ক্রয় বিক্রয়, মামলা মোকাদ্দমা ব্যাংকে লেনদেন, কোথাও ভর্তি, বিদেশ যাত্রা এরকম নানাবিধ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। বর্তমান সরকার দেশের সর্বোস্তরের জনগণেকে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা প্রদানে স্মার্ট কার্ড বিতরণ এবং বৈধতা নিশ্চিত করে আসছে।
কিন্তু দেখা যায় অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে বিভিন্ন ভুল থাকে-নামের বানানের ভুল, নামের কোন অংশ সঠিক না আসা, ঠিকানায় ভুল, পিতা-মাতার নামের ভুল,জন্মতারিখ ইত্যাদি।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এবং আবেদন করার নিয়ম বা পদ্ধতি জানা না থাকলে ভোটার আইডি কার্ডধারীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। সেই সমস্যা থেকে মুক্তি বা সমাধানের উদ্দ্যেশ্যে আমাদের আজকের এই পোস্ট।
সরকারিভাবে নাগরিকদের ২০০৮ সাল থেকে ভোটার আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে। শুরু থেকেই এই জাতীয় পরিচয়পত্রে বিভিন্ন ভুল থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে নানা হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের সুযোগ থাকলেও অনেকেই তা কিভাবে করবেন এ সমস্যার সম্মুখিন হন।
অথচ ঘরে বসেই প্রমাণসহ অনলাইনে আবেদন করে ১৫ থেকে ২০দিনের মধ্যে এই ভুলগুলো সংশোধন করা যায়।
যেসব ভুলগুলো সংশোধন করা যায় তা হচ্ছে-
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনের জন্য এই ঠিকানায় প্রবেশ করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে এনআইডি নম্বর দিতে হবে। এই অ্যাকাউন্টেই অনলাইনে কোন ধরনের ভুল তথ্য সংশোধন করা হবে তার ধরন অনুযাযী ফি-এর তালিকা দেয়া লিংক পাওয়া যাবে।
পরিচয়পত্রে যেসব তথ্য দেয়া আছে তার একটি পরিবর্তন করতে চাইলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং এর পরবর্তীতে যতবার আবেদন করা হবে ৪০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের ধরন অনুযায়ি এর ফি নির্ভর করে। তবে সবধরনের ফিয়ের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ডে ছাপা আছে এমন তথ্য যেমন নিজ নাম/পিতা-মাতার নাম/স্বামী-স্ত্রীর নাম/ঠিকানা/রক্তের গ্রুপ সংশোধন।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডে ছাপা হয়নি এমন তথ্য যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ধর্ম, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরিবর্তন ।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ডে কোন ভুল হলে তা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে গিয়েও সংশোধন করা যায়।
এক্ষেত্রে যদি কেউ ঘরে বসেই অনলাইনে এন আইডি বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে ইচ্ছুক হন তাহলে তিনি উলিখিত উপায়ে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
অনলাইনে যেসব তথ্য সংশোধন করা যায়-
১. অনলাইনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তন করতে হলে সবার আগে বাংলাদেশ এনআইডি পোর্টাল বা ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
২. রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে গেলে সেখানে দেয়া লিংকে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে।
৩. লগ ইন এর পর একটি ওয়েবপেজ দেখতে পেলে এই লিংক বা উপরে বাম পাশে থাকা ‘প্রোফাইল’ ট্যাব এ ক্লিক করতে হবে।
৪. প্রোফাইল ট্যাব আসার পর নাম, জন্মতারিখ,জন্মস্থান, মা-বাবার নামসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যক্তিগত তথ্য দেখা যাবে।
৫. এরপর উপরের ডানদিকে ‘এডিট’ নামের একটি বাটন দেখা যাবে।
৬. এডিট বাটনে ক্লিক করলে জাতীয় পরিচয় পত্রের নির্ধারিত তথ্য পরিবর্তনের জন্য প্রযোজ্য ফি বা চার্জ এর তথ্য দেখা যাবে।
৭. সেখান থেকে ‘বহাল’বাটনে ক্লিক করলে এডিট প্রোফাইলে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানে এসে কার্ডধারীরর সব ব্যাক্তিগত তথ্য পুনরায় দেখা যাবে।
৮. এখানে প্রতিটি তথ্যের পাশে একটি বক্স থাকবে। এই বক্সগুলোয় ক্লিক করলে বক্সটি টিকমার্কযযুক্ত হবে এবং চিহ্নযুক্ত বক্সের তথ্য এডিট করা যাবে।
৯. এই পেজ থেকে এনআইডিতে থাকা নাম, জন্ম তারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর, মা-বাবার নাম ইত্যাদি পরিবর্তন করা যাবে। ফলে যেসব তথ্য পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক সেগুলোর পাশে টিকচিহ্ন দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য এডিট করে নিলেই হবে।
১০. এডিট হয়ে গেলে উপরের ডানদিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
১১. এরপর আপনাকে পরিবর্তন ট্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এডিট করার পর পরিবর্তনকৃত অবস্থা দেখানো হবে। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে ট্রানজেকশন ট্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে।
১২. এখান থেকেই পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
১. বিকাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে হলে অ্যাপটির ‘পে বিল’ অপশনটি ওপেন করতে হবে।এরপর ‘সরকারি ফি’ অপশন থেকে এনআইপি সার্ভিস বাছাই করে যে সেবার জন্য আবেদন করা হয়েছে তা নির্ধারন করে পেমেন্ট করতে হবে।
রকেটের ক্ষেত্রে অ্যাপ খোলে ‘পে বিল’ অপশনে যেতে হবে। সেখান থেকে ‘১০০০’ লিখে সার্চ করার পর ‘ইসি বাংলাদেশ’ অপশনটি আসলে তা সিলেক্ট করতে হবে।
এরপর কার্ডধারীকে অন্য একটি পেজে নিয়ে যাওয়ার পর এনআইডি কার্ডের নম্বর চাওয়া হবে। নম্বরটি দেয়ার পর এই কার্ড নম্বরের জন্য দেয়া টাকা ডিপোজিট হবে। পরবর্তীতে ‘এপ্লিকেশন টাইপ’ লেখাটিতে ক্লিক করলে কোন পরিবর্তনের জন্য কোন সংখ্যা লিখতে হবে তা দেখানো হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যাটি লিখতে হবে।
এরপর পেজের নিচের দিকে ‘পে ফর’ লেখা দেখা যাবে। সেখান থেকে নিজের জন্য ফি পরিশোধ করলে ‘সেলফ/Self’ অন্যের জন্য হলে ‘আদার/Other’ এ ক্লিক করতে হবে।
সব তথ্য পূরণের পর ‘ভেলিডেট’ লেখাতে ক্লিক করতে হবে এবং ‘ওকে’ চাপতে হবে। ‘বিলার শর্ট নেম’ নামে কোন বক্স দেখানো হলে সেখানে কার্ডধারীর নামের শর্টফর্ম লিখতে হবে।
এরপর কত টাকা পাঠানো হবে সে বিষয়ক তথ্য দেখা যাবে। মোবাইল অ্যাকাউন্টের পিন দিয়ে প্রক্রিয়াটি সম্পন্নের পর বিলের একটি রশিদ দেয়া হবে।
বিল পরিশোধের পর আইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তন পেজে পুনরায় প্রবেশ করতে হবে।
‘ট্রানজেকশন’ পেজটি রিলোড করার পর দেখা যাবে পরিশোধকৃত অর্থ এখানে আবার প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করার পর ব্যবহারকারীকে কাগজপত্র ট্যাবে নিয়ে যাওয়া হবে।
সেখানে তথ্য সমূহের বৈধতা প্রমানে এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র অথবা জন্মসনদের স্ক্যানকপি নিয়ে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এখন আইডি কার্ডের সব তথ্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বলা হবে। উপস্থাপন করা তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ডানদিকে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করলে নতুন প্রোফাইল পেজ দেখা যাবে।
প্রোফাইলের নিচের দিকে থাকা ‘বিস্তারিত বাটনে’ ক্লিক করলে একটি নতুন পেজ দেখা যাবে ।
এই পেজের ওপরের ডানদিকে ‘ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করলে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড হবে। এই কপিটি সংরক্ষণ করতে হবে।
এরপর ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে কোথায় নতুন আইডি কার্ড পাওয়া যাবে। উল্লেখিত স্থানে পিডিএফ এর প্রিন্ট কপি নিয়ে গেলেই নতুন তথ্যযুক্ত আইডি কার্ড দেয়া হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একটি তথ্য শুধুমাত্র একবারই সংশোধন করা যাবে। তাই তথ্য সংশোধনের সময় খেয়াল রাখতে হবে পরিবর্তনটি যেন একদম ঠিকঠাক হয়।
উপরে উল্লেখিত উপায়ে আপনি চাইলেই সহজেই অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন- এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।