স্টাফ রিপোর্টার।।
অস্থির হয়ে উঠেছে খুলনার নিত্যপণ্যের বাজার। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। ক্রেতারা বলছেন- চাল, ডাল, চিনি, তেল, সবজি, মাছ, গোশ্ত, ডিম, মসলাসহ প্রতিটি পণ্যে এখন আকাশ ছোঁয়া দাম। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশির কারণে বাজারে নিত্যপণ্যে ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন খুচরা প্রতি কেজি ১৯০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, ডাল (মুসুর) ১০৫ টাকা, আটা প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, ময়দা কেজি ৫৫ টাকা, পিয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, রসুন ৭০ টাকা টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে তেল, চিনি, ময়দা, পিয়াজসহ অন্য জিনিসের দাম।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা চালের বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি ২৮ বালাম ৫৪-৬০ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬২-৬৮ টাকা, বাসমতি ৭২-৮০ টাকা ও স্বর্ণা মোটা ৪৬-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। একাধিক খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কয়েকদিনে ব্যবধানে প্রতিটি চালের মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৮ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ভারত হতে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে, তবে সরকার যদি চাল এল.সি করে তবে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। দিনাজপুর থেকে চাল আনতে যে খরচ পড়ে বর্তমানে তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে তার বহুগুণ খরচ বাড়তি বলে অভিযোগ করেন চাল ব্যবসায়ীরা।
মাছ বাজারেও বিভিন্ন দেশি ও সামুদ্রিক মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কয়েকদিনের ব্যবধানে পাইকারি মাছ বাজার বা আড়ত থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে মাছ।
একই চিত্র নগরীর মাংসের বাজারেও। কয়েকদিনের ব্যবধানে বেড়েছে মাংসের দামও। নগরীর বাজারে গরুর গোশত একলাফে ৬৫০ টাকা হয়েছে। মুরগি বয়লার প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, কক ২৬০ টাকা, লেয়ার ২৬০ টাকা, সোনালী ২৬০ টাকা, প্যারিস ২৪০ টাকা, দেশি ৪শ’ টাকা ও দেশি হাঁস ৩৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী নয়ন জানান, আমাদের মোকাম বা ফার্ম হতে যে দামে কিনি তার মধ্যে খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রতিটি মুরগিতে কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা লাভে বিক্রি করি। দুই দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম হুড়হুড় করে বেড়ে গেছে। কেজি প্রতি বেড়ে ১০-১৫ টাকা বলে জানান তিনি।
নগরীর সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিয়া ঝাঁল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি, বরজের ঝাঁল বিক্রি হচ্ছে ২শ’ টাকা কেজি। ইতিমধ্যেই সবজির বাজারে ডবল সেঞ্চুরি মেরেছে কাঁচা ঝাঁল। তাছাড়া বেগুন ৬০ টাকা, ওল ৬০, মুলা প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, উস্তে ৮০ টাকা, পাতা কপি ৬০ টাকা, বটবটি শিম ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, কচুরমুখি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা, পুইশাক ৩০ টাকা, ঢেড়শ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৩০ টাকা, কলা প্রতি হালি ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতারা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই সবজি বাজারে দাম একটু বাড়তি। তবে যে দামে সবজি কেনা হয়ে থাকে তা হতে ৫/৭ বেশি দামে খুরচা বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
ফলের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মালটা (আফ্রিকান) ২৪০ টাকা, মালটা (চায়না) ২২০ টাকা, কমলা ২৪০ টাকা, আনার ২৮০ টাকা, আঙ্গুর লাল ৩৫০ টাকা, আপেল (অস্ট্রেলিয়ান) ২৬০ টাকা, আপেল (গালা) ২৬০, আম বারি-(৪)- ২৬০ টাকা ও আসশিনী আম ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা রাকিন জানান, প্রতিটি ফলের দামই কমবেশি বেড়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আপেল, আনার ও আমের দাম বেড়েছে।
সবজি ক্রেতা রফিকুল জানান, বাজারে যথেষ্ট আমদানি বা সরবরাহ রয়েছে, তবে দাম আকাশ ছোঁয়া। গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রতিটি নিত্যপণ্যের ওপর। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কেজির কোনো সবজি ধরতে গেলে বিক্রিই হচ্ছে না। একশ’ টাকার নিয়ে সবজি বাজারে ঢুকলে মাত্র ২ প্রকার সবজি কেনা যায়। আর মাছ-গোশত, চাল-ডাল, আটা-ময়দা তো পরেই থাকলো। সাধারণ মানুষ বাঁচবে কি করে?
নগরীর মুরগির বাজারে আসা ক্রেতা সাহিদা জানান, এমনিতেই মানুষের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হুড়হুড় করে বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে না বাড়তে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দুইদিনে ব্যবধানে বয়লার, কক, লেয়ার, সোনালী, প্যারিস, দেশি প্রতিটি মুরগিতে কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্রেতা জানিয়েছেন তেলের দাম বাড়তির কারণে পরিবহন ভাড়া বেশি। তাই অন্য মুরগি ক্রয় করতে বাড়তি দাম রাখছেন ব্যাপারী বা ফার্ম মালিকরা।
ইজিবাইক চালক আফজাল জানান, বাজারে হুটহাট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়, কোনো আন্দোলন নেই, নেই সোরগোল। অথচ আমাদের ভাড়া যদি ৫ টাকা বাড়নো হয়, যাত্রীদের আন্দোলন, হামলা-দাঙ্গার শেষ নেই। বর্তমান বাজারে ঢুকে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা-ময়দা, সবজি সবকিছুর দাম বেশি। আমরা সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ যাবো কোথায়? বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
লিটন বলেন, মোটরসাইকেল চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। চেষ্টা করছি যতটুকু প্রয়োজন সে অনুসারে গাড়ি ব্যবহার করার। কারণ তেলের দাম যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে গাড়ি চালানো খুবই কঠিন। পাম্প হতে ১শ’ টাকার তেল নিলাম তাতে .৭৬ পয়েন্ট তেল হয়েছে, যা খুলনায় দু’বার গেলেই শেষ। বর্তমানে খুলনায় অধিকাংশ সময় মাহেন্দ্রা বা সিএনজিতে যাচ্ছি। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মোটরসাইকেল বের করছি না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ বা গ্যাস প্রত্যেকটি জিনিসই মানুষের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সবকিছুর দামই বেড়ে যাচ্ছে। তেলের দাম বাড়াতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পরিবহনখাত, কৃষিখাতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে পণ্যে বহনের ক্ষেত্রে একটি পরিবহন এক স্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তরের জন্য যথারীতি ওই পণ্যের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমি মনে করি হঠাৎ জ্বালানি তেল বৃদ্ধিতে জীবন যাত্রায় যে প্রভাব ফেলছে, সেটি যদি দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হতো, তবে সব শ্রেণির মানুষ সহ্য করে নিতো।
Post Views:
16